এম.শাহীন আল আমীন,জামালপুর ।।
র্যাব কর্তৃক ৫ জনকে গ্রেফতারের পর ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে জোড়া খুনের ঘটনার জট খুলতে শুরু করেছে। র্যব নিশ্চিত হয়েছে ডাকাতির কাজে বাধা দেওয়ার কারণেই দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ডাকাতদল । র্যাব-১৪ ট্রেনে জোড়া খুনের ঘটনার রহস্য উদঘাটন অভিযানে ৫ জনকে গ্রেফতারের পাশাপশি হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্র ও ছিনতাই করা মোবাল ফোন উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার ও আলামত উদ্ধারের পর রবিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন র্যাব।
র্যাব-১৪ অধিনায়ক রোকনুজ্জামান বলেন, ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্বাধীন মিয়া (২৮)কে ময়মনসিংহ জেলা শহরের শিকারীকান্দা থেকে গ্রেপ্তার করে । একই সময় স্বাধীন এর কাছ থেকে লুট করা মোবাইল ফোন জব্দ করে র্যাব। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে র্যাব। র্যাব-১৪ অধিনায়ক রোকনুজ্জামান আরও জানান, ঘটনার দিন ডাকাতির উদ্দেশ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চারজন ডাকাত ঢাকা থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ওঠেন। পরে রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ময়মনসিংহের ফাতেমা নগর স্টেশনে থামলে তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ ও তার একজন সহযোগী যোগ দেয়। ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগির ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির এক পর্যায়ে সাগর ও নাহিদ বাধা দিলে ডাকাতদের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাথারী কুপিয়ে আহত করে। পরে সাগর ও নাহিদ ট্রেনের ছাদে অচেতন হয়ে পড়লে ডাকাতরা ময়মনসিংহ রেলস্টেশনে ঢোকার আগে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ট্রেন থেকে নেমে যায়। র্যাব জানান, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তিরা আরও জানিয়েছে যে, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার কমলাপুর এয়ারপোর্ট, টঙ্গী রেলস্টেশন ও গফরগাঁও ফাতেমা নগর স্টেশনে ডাকাতি এবং ছিনতাই করে আসছিল।হত্যাকান্ডের ঘটনায় ছুরিকাঘাতে নিহত সাগরের মা হনুফা খাতুন ২৪ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ময়মনসিংহ জিআরপি থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৮/১০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
গ্রেপ্তাকৃতরা হল- ময়মনসিংহ শহরের শিকারী কান্দার আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬), বাঘমারার মঞ্জুর মিয়ার ছেলে মাকসুদুর হক রিশাদ (২৮), সাব্বির খানের ছেলে মো. হাসান (২২), আশরাফ আলীর ছেলে রুবেল মিয়া (৩১) ও সাব্বির খানের ছেলে মোহাম্মদ (২৫)।
উল্লেখ্য ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার কমলাপুর থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশ্যে কমিউটার ট্রেন ছেড়ে দেয়। ট্রেনে একদল ছিনতাইকারী ট্রেনের ছাদে উঠে ছাদের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে নেয়। পরে ছিনতাইকারীর দলটি চলন্ত ট্রেনের ইঞ্জিনের বগির ছাদে অবস্থান করতে থাকে। ট্রেনযাত্রী নিহত নাহিদ মিয়ার নেতৃত্বে অন্যান্য যাত্রীরা ছাদের উপর ছিনতাইকারীদের ছিনতাই কাজে বাধা দেয়। ওই সময় ছিনতাইকারীরা ট্রেনের ছাদের য়াত্রীদের উপর হামলা করেন। হামলায় ধারালো অস্রের আঘাতে জামালপুরের ইকবালপুর এলাকার নাহিদ মিয়া (৪০) ও সাগর মিয়া (২২) নামে দুই ব্যাক্তি গুরুত্বর আহত হয়।
জামালপুর রেলওয়ে পুলিশ আহত দুই ব্যাক্তিকে ট্রেনের ছাদ থেকে উদ্ধার করে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আহত নাহিদ মিয়া ও সাগর মিয়াকে মৃত ঘোষনা করেন।