কুমিল্লা বুরো:
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্নপুর গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সফুরা বেগমকে শ^াসরোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
গত রোববার মধ্যরাতে ওই পল্লী চিকিৎসকের নিজ বাড়িতে এই ঘটনা ঘটনা ঘটে। পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ, পুত্রবধু এই ঘটনার সাথে জড়িত। এদিকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের সূত্র ধরে শামিম নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে পুলিশ। পুলিশ বলছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রোববার মধ্যরাতে বৃষ্টির সময় ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত চিকিৎসক বিল্লালের ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা পল্লী চিকিৎসক ও তার স্ত্রীর হাত-পা বেঁধে স্টাম্পসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের খোঁজ করেন। সেগুলো না দেওয়ায় শ্বাসরোধে তাদেরকে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও জড়িত থাকার সন্দেহে তাদের পুত্রবধু শিউলিকে আটক করেছে পুলিশ। নিহতের মেয়ে ও স্বজনদের দাবি, শিউলিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে খুনীদের নাম। নিহত বিল্লাল হোসেন ও সফুরা বেগমের দুই মেয়ে বিলকিস ও বিনু স্বামীর বাড়িতেই থাকেন। খবর পেয়ে বাবার বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা।
নিহত পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনের মেয়ে বিলকিস আক্তার জানান, খবর পেয়ে বাড়ি এসে কথা বলে জানতে পারি রবিবার মধ্যরাতে বৃষ্টির সময় ৭-৮ জন দুর্বৃত্ত চিকিৎসক ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় দুর্বৃত্তরা আমার বাবা ও মায়ের হাত-পা বেঁধে মূল্যবান জিনিস ও স্টাম্পসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের খোঁজ করে। ধারনা করছি, সেগুলো না দেওয়ায় শ্বাসরোধে তাদেরকে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
তিনি আরো জানান, আমাদের ধারনা আমার ভাইয়ের স্ত্রী শিউলি এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারে। গত রমজানে বাবা মায়ের সাথে শিউলির পারিবারিক কলহের ঘটনা ঘটে। সে সময় তার সাথে কিছু বিষয়ে চুক্তি স্টাম্পে লেখা হয়। সেসব স্টাম্পের জন্য কিংবা মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিতেই হত্যাকান্ড। তবে এ খুনের ঘটনায় কারা জড়িত তা বের করবে পুলিশ। আমি হত্যাকারীদের দ্রুত শাস্তি চাই। ফাঁসি চাই।
বিল্লাল হোসেনের ছোট মেয়ে বিনু আক্তার জানান, প্রশাসনের কাছে জোর দাবী আমার বাবা মায়ের হত্যার সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।
নিহত চিকিৎসকের ভাই সুলতান আহমেদ জানান, রাত আনুমানিক ১২ টায় আমার ভাতিজার বউ শিউলি আমাদের ঘরের সামনে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। সে জানায় তাদের ঘরে ডাকাত ঢুকেছে। আমরা দৌড়ে গিয়ে দেখি- বিল্লাল ভাইকে সোফার সাথে হাত পিছনের দিকে দিয়ে বাঁধা। তার গায়ের উপর হাত পা বাঁধা অবস্থায় ভাবীও পরে আছে। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই মরদেহ উদ্ধার করে কোতয়ালী মডেল থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারনা করা হচ্ছে গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে তাদের। পুলিশসহ পিবিআই ও সিআইডি টিম বিষয়টি তদন্ত করছে।
৫নং পাঁচথুবী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও সুবর্নপুর এলাকার বাসিন্দা মোতাহের হোসেন বলেন, চিকিৎসক বিল্লাল হোসেন একজন স্বজ্জন লোক ছিলেন। তার কারো সাথে দ্বন্দ ছিলো না বলেই জানি। তারপরও যারাই তাদের হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবী করছি।
৫নং পাঁচথুবী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বাহালুল , খবর পেয়ে রাতে আমি ঘটনাস্থলে যাই। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন নিহত বিল্লাল হোসেনের পুত্রবধু শিউলি ও জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় স্থানীয় শামিম নামে পুলিশ দুজনকে আটক করে। শিউলি আক্তারের স্বামী প্রবাসে থাকায় সে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জরিত থাকার বিষয়টি ও স্থানীয় একটি জমি রেজিষ্টি সংক্রান্ত নিয়ে বিরোধ এ দুটি ঘটনায় এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনওয়ারুল আজিম বলেন, এ হত্যা কান্ডের ঘটনায় আটক নিহত বিল্লালের পুত্রবধু শিউলি আক্তারের কথা মতে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধের সন্দেহে শামীম নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদেও জন্য আনা হয়েছে।
কুমিল্লা সদর সার্কেল এএসপি মোঃ সোহান সরকার জানান, প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে তাদেরকে শ^াসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই জনকে আটক করা হয়েছে।