ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে গলাটিপে হত্যার করেছে। এলাকাবাসী সূত্রে স্বামী ও শাশুড়ির উপর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে।ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী ও শাশুড়ি পলাতক রয়েছেন। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের পোড়াবাড়িয়া গ্রামে গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
জান্নাতুল ফেরদৌস মানছুরা (২০) নামে এই গৃহবধূ এ গ্রামের ইব্রাহিম শেখ (৩৮) ওরফে সেলিম মিয়ার স্ত্রী। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের চার বছর বয়সী কন্যা সবিতা।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পোড়াবাড়িয়া গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে ইব্রাহীম শেখ ওরফে সেলিমের সঙ্গে ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী উস্থি ইউনিয়নের কাজল মিয়ার মেয়ে মানছুরার। বিয়ের ছয় মাস পর সেলিম দুবাই চলে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় সে অসুস্থ হয়ে পড়লে ছয় মাস আগে শ্বশুর কাজল মিয়া দুই লাখ টাকা খরচ করে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসা করান।
সম্প্রতি বাবার বাড়ি থেকে ১০ লাখ টাকা এনে দিতে গৃহবধূ মানছুরাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল স্বামী ইব্রাহীম ওরফে সেলিম। এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে টাকা চাওয়া নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় মানছুরার। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উত্তপ্ত হয়ে স্বামী সেলিম ও তার মা জেসমিন মিলে মানছুরা কে গলাটিপে হত্যা করে।
নিহতের চার বছরের শিশু সবিতা তার নানা-নানী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সামনে অকপটে বলতে থাকে সকালে তার মাকে প্রথমে মারধর করেন তার বাবা। পরে তার দাদী জেসমিন তার মায়ের পা চেপে ধরেন এবং তার বাবা গলাটিপে হত্যা করেন।
এ কথাগুলো বলার সময়ে অশ্রুসিক্ত শিশুটি ছিল আতঙ্কিত।
নিহতের ছোট বোন কলেজছাত্রী আরজিনা আক্তার মীম বলেন, আমাদের ছোট্ট ভাগ্নি এ হত্যার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। সে যেভাবে সবার সামনে অপকটে হত্যার বিবরণ দিচ্ছে তাতে আর কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রয়োজন পড়ে না। আমার বোনের স্বামী ও তার মা-ই হত্যাকারী। আমরা বোনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।
নিহতের বাবা কাজল মীর বলেন, তাকে বিদেশ (দুবাই) পাঠানো থেকে শুরু করে দেশে ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকা দিয়েও মেয়ের জীবন বাঁচাতে পারলাম না।
এ বিষয়ে গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ মাহফুজা খাতুন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে খাটের উপর শুয়ানো অবস্থায় মরদেহ পেয়েছি। শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।