যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন শিশুকে খুনের মামলায় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য ৪ জন হলেন সহকারি তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুক, ফিজিক্যাল ইনসট্যাক্টর একেএম শাহানুর আলম ও সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান। ঘটনার রাত থেকেই তারা পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। শনিবার পুলিশ আটককৃতদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠান।
এসময় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান আসামি
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, মাসুম বিল্লাহ ও মুশফিকুর রহমানকে ৫দিন এবং শাহানুর আলম ও ওমর ফারুককে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে, শনিবার যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আশরাফ হোসেন প্রেস ব্রিফিংয়ে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। এসপি বলেছেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পৈশাচিক নির্যাতনে ৩ বন্দি নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্য নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এসপি আশরাফ হোসেন ব্রিফিংয়ে আরো জানান, ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৩ আগস্ট। এদিন কিশোর বন্দী হৃদয়কে চুল কেটে দিতে বলেন কেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রধান নূর ইসলাম। ঈদের আগে হৃদয় প্রায় দু’শ বন্দির চুল কাটায় তার হাত ব্যথা হয়েছে।
এ কারণে পরে চুল কেটে দেয়া হবে বলে জানালে ক্ষুব্ধ হয় নুর ইসলাম। তিনি কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেন যে- হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন নেশা করেছে। এছাড়া হৃদয়ের সাথে বন্দি পাভেলের সমকামী সম্পর্ক আছে। ওই নালিশ শুনে ফেলে অপর বন্দি নাইম। সে বিষয়টি পাভেলকে জানায়। তখন পাভেলসহ তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়। এবং নুর ইসলামকে মারপিট করে। এতে নুর ইসলামের হাত ভেঙ্গে যায়।
তিনি আরো জানিয়েছেন, জাতীয় শোকদিবস পালন উপলক্ষে ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় ‘নূর ইসলামের ওপর হামলাকারীদের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়। পরে শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়। ওই ৫ কর্মকর্তার সাথে তাদের অনুগত আরো ৭/৮জন বন্দি ওই ১৩ জনকে মারপিট করে। মুখে গামছা ঢুকিয়ে জানালা দিয়ে হাত বাইরে বের করে টেনে ধরে পেছনে লোহার রড, ক্রিকেট স্ট্যাম্প ইত্যাদি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। অচেতন হওয়ার জ্ঞান ফিরলে ফের মারপিট করা হয়। পালাক্রমে এভাবে মারপিটের পর গুরুতর জখম অবস্থায় এদের একটি ঘরে ফেলে রাখা হয়।
নির্যাতনে মারা যায় ৩ জন । তারা হলো বগুড়ার শিবগঞ্জের তালিবপুর পূর্বপাড়ার নান্নু পরমানিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭), একই জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) এবং খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮)। আহত হন ১৫ জন। তাদের উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসপি বলেছেন, ঘটনার পর পুলিশ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মামলাটি পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে প্রকৃত চিত্র ও প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আদালতে উপস্থাপন করা যায়। যেহেতু তারা সরকারী কর্মকর্তা। তদন্তে পুলিশ অনেক দুর এগিয়েছেন। প্রেস ব্রিফিং এ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তৌহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রাব্বানী, যশোর কোতয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনসপেক্টর রকিবুজ্জামান প্রমুখ।
রকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়। এছাড়া বিচারক মামলার ৫ সাক্ষীর জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় গ্রহণ করেছেন। চাঞ্চল্যকর এই মামলায় সাক্ষীরা হলেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মচারি তারভীর হোসেন, বাবুল হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম ও রফিকুল আলম।