ঝিনাইদহে শিক্ষার্থীদের করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে সরকার যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছেন ঠিক সেই মুহুর্তে ঝিনাইদহ জেলা সদর উপজেলা সহ পার্ষবর্তী সকল উপজেলার এক শ্রেণীর শিক্ষক ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা তাদের কোচিং বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছেন। সামাজিক দূরত্ব,স্বাস্থ্য বিধির কোন তোয়াক্কা না করেই এসব শিক্ষক ও কলেজ পডুয়া ছাত্ররা দলবদ্ধভাবে নিজ বাসায় অথবা কোচিং সেন্টারে সকাল-সন্ধ্যা তাদের কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছেন। করোনার জন্য স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে খোদ এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরাও কোচিংয়ে জড়িয়ে পড়ায় উপজেলা জুড়েই চলছে অবৈধ কোচিং বাণিজ্য। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্তেও এ উপজেলায় বন্ধ হয়নি কোচিংবাণিজ্য ! অর্থের লোভে খোদ ‘মানুষগড়া কারিগর নামের অনেক শিক্ষকই শিক্ষার নীতিমালা ও নৈতিকতা ভুলে গিয়ে আদর্শ বিচ্যুত হচ্ছেন।
ফলে কোচিং বাণিজ্য এখন তুঙ্গে। কাঙ্খিত শিক্ষার পিছনে বছরে লাখ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে কোচিং সেন্টারগুলো। অভিযোগ রয়েছে, সরকার ঘোষিত নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে খোদ এমপিও সুবিধাভোগি শিক্ষকরা একদিকে কোচিং সেন্টারের মালিক হয়ে যেন শিক্ষার প্রসারের নামে শিক্ষা বাণিজ্যের আদলে ‘কোচিং সেন্টার’ নামক দোকান খুলে বসেছেন। জানা যায়, উপজেলার খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বনামধন্য শিক্ষকরাও নিজেদের তত্ত্বাবধানে বাসাবাড়িতে সাইনবোর্ডবিহীন কোচিং ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছেন। ব্যাচে ব্যাচে শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়ছে। একশ্রেণির কোচিংবাজ শিক্ষকদের চাপে সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী কোনো না কোনোভাবে মূল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্থের বিনিময়ে কোচিংয়ে পড়ছে। এ হিসাবে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীই এক পর্যায়ে কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য। ফলে কোচিং সেন্টারগুলোর মালিক শিক্ষকরা শিক্ষার নাম ভাঙিয়ে বছরজুড়েই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শিক্ষকরা শিক্ষা নামের নগ্ন বাণিজ্যে বেপরোয়াভাবে জড়িয়ে পড়ায় নিজ স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই গণিত, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থসহ পাঠ্যসূচির বিষয়গুলো শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে বাধ্য হচ্ছে। কোচিং করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষার্থীদের অকপট উত্তর ‘ক্লাসে যা পড়ায়, তাতে হয় না। সেখানে ভালোমতো বোঝানো হয় না। তাই কোচিং তো করতেই হয়। শত শত শিক্ষার্থীর একই মনোভাব ক্লাসে বুঝি না। বোঝানো হয় না। অভিভাবকের মুখেও একই কথা শুনা যায়। অভিভাবদের অভিযোগ, সরকার কোচিং নিষিদ্ধ করেছে। সন্তানের ভালো রেজাল্টের আশায় কোচিং সেন্টারে পড়াতে বাধ্য হতে হয়। এ বিষয়ে উপজেলার নগরবাথান গ্রামের একজন অভিভাবক জানান, শুধু করোনা বা সংক্রমণ এড়াতে প্রাইভেট পড়াতে পারছি না ছেলেকে। নগর বাথান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানান, একমাত্র অজ্ঞ শিক্ষক এবং অভিভাবকরাই কেবল দেশের এ ক্রান্তিকালে ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট মাষ্টারদের কাছে পাঠাচ্ছে। এ ছাড়া নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অবসর সময়টি কাজে লাগানো যাচ্ছে।
কোচিং ও প্রাইভেট শিক্ষকদের নামের তালিকায় নগর বাথান বাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি কোচিং এর পরিচালনা করেন এম এ খালেক কলেজের প্রভাষক মোঃ নজরুল ইসলাম। সেখানে নজরুল ইসলাম সহ ৬জন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র দিয়ে কোচিং চালানো হচ্ছে। এরা হল দেলয়ার, হাবিব, সোহাগ, সোহেল, ও সাগর।একই এলাকার সেন্টু নামে তার নিজ বাড়িতে ১০/১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি ছোট খুপড়ির মধ্যে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসিয়ে পড়াচ্ছেন।সে পেশাই একজন প্রাইভেট শিক্ষক নামেই পরিচিত। এছাড়াও নগর বাথান বাজারের পশ্চিম পার্শে নজরুল ইসলাম নামে আরেক শিক্ষক। সে রাম নগর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক। কোন স্বাস্থ্য সেবা না মেনেই তার নিজ বাড়িতে ২০/৩০ জন করে ২/৩ ব্যাচে শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। এছাড়াও উপজেলার কালিচরন পুর ইউনিয়নের ‘মোসলেম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়য়ে’র শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে একি ইউনিয়নের ভগবান নগর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসায় বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে প্রাইভেট পড়াতে দেখা গেছে। এছাড়াও উপজেলার কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝপঝপিয়া গ্রামের সাগর ,ও জাহাঙ্গীর নামের ২জন প্রাইভেট শিক্ষক, তাদের নিজ বাড়িতে ও বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে প্রাইভেট পড়ায় বলে জানা গেছে।
কোটচাঁদপুর উপজেলারা গ্রামে ও শহরে প্রকাশে সাস্থবিধি না মনে প্রাভেট পড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলো যেন করোনাই বন্ধ থাকার সুযোগে কোচিং ও প্রাইভেট সেন্টার হয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার সুশান্ত কুমার দেব বলেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ কেউ করেনি।বিষয়টি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।