গত ইং ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে দৈনিক সকালের সময় নামে একটি পত্রিকায় ১ম এবং ২য় পৃষ্ঠার ৪ নং কলামে ‘মহাসচিবের নামে আশুলিয়া থানায় ২ মামলা’ এর উদ্ধৃতি দিয়ে ‘জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থায়’ ছাত্র হত্যা মামলার আসামিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার মহাসচিব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মো: আইয়ুব আলী হাওলাদার।
এক প্রতিবাদ লিপিতে তিনি বলেছেন, আমাকে জড়িয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আমি চার বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারাই। এরপর জন্মস্থান বরিশাল জেলার সাগরদী সরকারি অন্ধ বিদ্যালয়ে ব্রেইল সিস্টেমে পড়াশোনা শেষ করে রাজধানীর প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ, (এলএলবি) সম্পূর্ণ করি। আমি এই সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, যে তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রকৃত অনুসন্ধান করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতো।
গত ইং ২০১৩ সালের নির্বাচনে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রত্যক্ষ ভোটে মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়ে সংস্থার কার্যক্রম সুনামের সাথে পরিচালনা করে আসছি। প্রতি ৩ বছর পরপর সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যাহা সমাজসেবা অধিদপ্তর, আগারগাঁও, ঢাকা থেকে পরিচালনা করা হয়।
প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে সংস্থার অধিনে (বুক বাইডিং মেশিন, সাদা ছড়ি, ব্রেল তৈরির মেশিন, ব্রেন থার্মো ফরম মেশিন, ১০ টন ব্রেল বই, পবিত্র ব্রেল কোরান শরীফ, অত্যাধুনিক টেলিফোন অপারেটিং মেশিন ও ৪০ টি কম্পিউটারসহ প্রায় ২০ কোটি টাকার মালামাল ছিল। অথচ কম্পিউটার এবং অন্যান্য মালামাল কোথা থেকে ক্রয় করা হয়েছে বা কে দিয়েছে তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। সংস্থায় আমি মহাসচিব পদে নির্বাচিত হয়ে আসার পর থেকে আব্দুল লতিফ রানা কর্তৃক আনিত প্রকাশিত তথ্যের কোনো মালামাল সংস্থায় ছিলনা।
তাছাড়া প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে আমাকে যুবলীগের নেতা বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ আমি কখনো কোন রাজনৈতিক দলের নেতা কিংবা কর্মী ছিলাম না। এরকম কোনো প্রমানাদি প্রতিবেদক দেখাতে পারবে না। সংবাদে উল্লেখিত সাবেক সংসদ সদস্য হাজী মোঃ সেলিম বা তার কোনো কর্মীর সাথে আমার কোন স্বাক্ষাৎ হয়েছে এমন কোনো প্রমানাদিও দেখাতে পারবে না।
একটি পক্ষ নিজেরাই এমন ভুয়া বানোয়াট কথা তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছে। আমি এতে সামাজিক, মানষিক ও দাফতরিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে দৈনিক সকালের সময় পত্রিকাটিকে বিষয়টি আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত ছিলো বলে আমি মনে করছি।
প্রকাশিত সংবাদে অভিযোগকারী হারুন অর রশিদ জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার কোনোরূপ সদস্য নন, সেখানে তার পরিচয় অসত্য লেখা হয়েছে। তিনি তার সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার জন্য মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৫ টি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলাগুলো অসত্য হওয়ায় নিষ্পত্তি হয়ে যায়। একাধিকবার মামলা করেও তিনি তার সদস্যপদ ফিরে পাননি। এবং কোনো ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করা ছাড়াই হারুন অর রশিদ তার নামের সাথে ড. কথাটি যুক্ত করে থাকেন। সংস্থার মহাসচিব একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও অভিযোগকারি অসত্য তথ্য দিয়ে প্রতিবেদকের মাধ্যমে ভুল সংবাদ ছাপিয়েছেন।
প্রতিবেদনের অভিযোগকারি যে সকল ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেছেন, তারা কোনো সন্ত্রাসী নন। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী আব্বাস আলী ও বিএনপি নেতা আব্দুর রহমান সাভার পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং এলাকায় সুপরিচিত ও ভালো মানুষ। এছাড়াও বাকি সবাই সংস্থা কতৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তারাও এই ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করায় দুঃখ প্রকাশ করে সংবাদের প্রতিবাদ করেছেন।
এদিকে সংস্থার অধিনস্থ সাভার মার্কেট থেকে আয়কৃত অর্থ অন্ধদের কল্যানে ব্যয় করা হয়, যেমন: চিকিৎসা সাহায্য, আর্থিক সাহায্য, বয়স্ক ভাতা, বিবাহ সাহায্য, ক্ষুদ্র ব্যাবসা,পুনর্বাসনের জন্য শেলাই মেশিন, গৃহ নির্মাণের জন্য ঢেউটিন, মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের সাহায্য, কম্বল, জিআর চাল, বন্যার্থদের মাঝে ত্রান বিতরন, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য শিক্ষাবৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন অনুদান প্রদান করা হয়। অথচ অভিযোগকারি হারুন অর রশিদ মিথ্যা অভিযোগ করে তা সংবাদে উল্লেখ করিয়েছেন।
আমি রাজধানীর মিরপুরের কাফরুল থানা এলাকায় প্রায় ৬-৭ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছি। আমি কখনো আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কোনো কাজে যাইনাই এবং আমি কারো সাহায্য ছাড়া একা চলাফেরা করতে পারি না।
অথছ, কুচক্রি মহলের কতিপয় ভূঁইফোড় দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধী ও তাদের দোসররা আমাকে হয়রারি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে ২ টি গুলি করে হত্যা চেষ্টার মিথ্যা মামলা দায়েরে বাদীকে সহযোগিতা করেছেন। মামলা নং যথাক্রমে, ৮২(১০)২৪ এবং ৬৭(১০)২৪। বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক এ সংক্রান্তে গত ২৫/১১/২০২৪ ইং তারিখে অন্তবর্তিকালীন সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, মহা-পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), উপ-মহা-পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) ঢাকা রেঞ্জ, জেলা প্রশাসক ঢাকা, পুলিশ সুপার (এসপি) ঢাকা এবং ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ আশুলিয়া থানাকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।
এরআগে গত ইং ১৭/১১/২০২৪ তারিখে ‘জন্মান্ধ আইয়ুবের বিরুদ্ধে দুই মামলা’ শিরোনামে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধে গুলি করে হত্যা চেষ্টার মত ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলোর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওই প্রতিবেদনে মামলা সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য রয়েছে।
প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখিত গত ০৯/১২/২০২৪ ইং তারিখ রোজ সোমবার জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা ছিল। উক্ত সভায় সকল কার্যনির্বাহী পরিষদের কর্মকর্তা ও নির্বাহী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। অথচ সেই তথ্যেও ভয়াবহ মিথ্যাচার করা হয়েছে। এবংকি আমার মন্তব্যটি আংশিক দেওয়া হয়েছে। তাই পুরো বিষয়টি সংবাদে স্পষ্ট হয়নি।
একইভাবে ষড়যন্ত্র মূলক একই মহলের প্ররোচনায় দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে গত ৯ জুন ২০২১ ইং তারিখে ৫০ কেটি টাকা আত্মসাতের একটি মিথ্যা প্রতিবেদন ছাপানো হয়। পরে ওই প্রতিবেদনে বিস্তর অসত্য তথ্য থাকায় গত ১৫ জুন ২০২১ ইং তারিখে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় আমি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে গভীর ক্ষোভ এবং দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিগত ১০ ডিসেম্বর দৈনিক সকালের সময় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর বিরুদ্ধে আশুলিয়ায় ২ টি গুলি করে হত্যা চেষ্টার মামলা হওয়া সত্ত্বেও ‘জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থায়’ ছাত্র হত্যা মামলার আসামিদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল’ অর্থাৎ হত্যা চেষ্টা মামলাকে সরাসরি হত্যা মামলা মর্মে সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার মহাসচিব দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আইয়ুব আলী হাওলাদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার নামে উক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কে বা কারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এহেন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এতে আমাদের মত দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রাণের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা যে কোন জায়গায় সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে রাজি আছি। আমিসহ সংবাদে উল্লেখিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে ওঠা তথ্য সম্পূর্ণ অসত্য তাই এমন মিথ্যা ঘটনা সমর্থন করতে পারিনা বিধায় উল্লেখিত প্রতিবেদনটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
••বিজ্ঞপ্তি।
বা বু ম/ সুমন রায়