ইকরামুল হাসান –
সমাবর্তন, যা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একজন শিক্ষার্থীর প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে চিরমূল্যায়িত হয়ে থাকে। ঠিক তারই অংশ হিসেবে, দীর্ঘ আট বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৪র্থ সমাবর্তন- ২০২৫।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১৪ টি বিভাগের সর্বমোট ১৪০৫ জন শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে আয়োজনটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
এবারের সমাবর্তনে, স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত মোট ৪০ জন শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ ও পদক তুলে দেওয়া হয়।এর পাশাপাশি, ১০ জন চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল এবং ৩০ জনকে ভাইস চ্যান্সেলর’স গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।
উক্ত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এতে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
পাশাপাশি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. ইউনুস মিয়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, এমেরিটাস অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ফারহানাজ ফিরোজ এবং রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুল মতিন।

স্বাগত বক্তব্যে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. ইউনুস মিয়া শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা তোমাদের সমাবর্তন আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত। আমাদের প্রত্যাশা, তোমরা তোমাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে সমাজে অবদান রাখবে। এ সময় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে প্লাস্টিকমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন তিনি।
সমাবর্তনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন,জুলাইয়ের অভ্যুত্থান দেখিয়েছে, এই প্রজন্ম আর পুরনো নিয়মে বিশ্বাস করে না। তারা বদল চায়, আগের রাজনীতির ধাঁচ নয়। কিন্তু পরিবর্তন সহজ নয়, ক্ষমতাবানরা সবসময় বাধা দেবে, নেতিবাচক কথা ছড়াবে, তাতে কান দিবেন না। নিজ স্বপ্ন শুধু দেয়ালে নয়, মনে লিখে রাখেন।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে এই প্রজন্মকে তবে অনেক আত্মত্যাগ করতে হবে। সেটি শুরু হোক আপনার মধ্য থেকেই। নিজে না বদলালে, কেউই এসে তা বদলে দেবে না।”
সভাপতির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সবচেয়ে বড় জিনিস হল দেশ ও দেশের নাগরিকদের প্রতি তোমাদের কর্তব্য। মানুষের প্রতি দরদ থাকতে হবে। এখন দিনদিন মানুষের প্রতি সহানুভূতি কমে যাচ্ছে। কিন্তু দরদ, সহানুভূতি এবং পরার্থপরতা সবচেয়ে জরুরি।
বক্তব্য শেষে অর্থ উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের পরিহিত ট্যাসেলটি ডান পাশে হতে বাম পাশে পরিবর্তনের নির্দেশনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের প্রভাষক ফারিয়া জাহান তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। এই ঐতিহাসিক দিনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের অংশ হতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত। শিক্ষার্থীদের সাফল্যের মুহূর্তটি খুব নিবিড়ভাবে অনুভব করেছি। তাদের আত্মবিশ্বাস, স্বপ্ন এবং আনন্দ দেখে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমি বিশ্বাস করি, তারা তাদের শিক্ষা, মূল্যবোধ ও মানবিকতা দিয়ে সামনে একটি শক্তিশালী ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে এবং দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।

স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বক্তৃতায় শিক্ষার্থী জান্নাত আক্তার বলেন, এই অর্জন যতটুকু আমাদের নিজের, ঠিক ততটুকুই আমাদের শিক্ষকদের। আজ আমরা এই মাইলফলক উদযাপন করছি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে ডিগ্রি আর টাইটেল দিয়ে সব অর্জন হয় না। আমরা আমাদের সমাজ ও জাতির জন্য অবদান রাখতে চাই। আমরা পরিবর্তনের সাহস রাখি।
সমাবর্তন প্রাপ্ত শিক্ষার্থী শামস মাশরাকা তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ক্লাসরুম, বন্ধু, শিক্ষক আর পরিবার সহযোগিতায় যে পথটা তৈরি হয়েছিলো আজকের দিনটা সেই পথের এক সুন্দর অর্জন।
আরেকজন শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান সাগর জানান, এটা আমার জীবনের প্রধানতম অর্জনগুলোর একটি৷ ব্যক্তিগত কারনে আমি গ্রাজুয়েট হতে বেশি সময় নিয়েছি। তবুও ব্যাচের সঙ্গে সমাবর্তন নিতে পেরে আমি অনেক খুশি ও আনন্দিত৷ আমার বাবা-মার স্বপ্ন ছিলো আমি গ্রাজুয়েট হই সেটা পুরণ করতে পারায় ভালো লাগছে৷ সেই সঙ্গে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জুনিয়রদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা।
অনুষ্ঠানটির প্রথম পর্ব শেষে দ্বিতীয় পর্বে বিকেলে জমকালো আয়োজনে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে অংশগ্রহণ করে জনপ্রিয় সঙ্গীত ব্যান্ড বেঙ্গল সিম্ফনি এবং ওয়ারফেজ।

দুই ব্যান্ডের পরিবেশিত গানের তাল-লয় ও ছন্দের সংমিশ্রণে শিক্ষার্থীরা ফিরে যায় তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটানো সেই চিরচেনা মুহূর্তগুলোয়।
