ইকরামুল হাসান –
একজন শিক্ষক যিনি কিনা শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদানেই আবদ্ধ থাকেন না; শিক্ষার্থীর নীতি-নৈতিকতা, চিন্তা-চেতনা, জ্ঞান-গরিমা ও জীবনের পথচলায় তিনি হয়ে ওঠেন পর্দার আড়ালের আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। নিজের সমস্তটুকু দিয়েও নিজ সন্তানের মতন তার শিষ্যদের আজীবন সফলতার চরম উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় মত্ত থাকেন।
সেই সকল আলোকিত মানুষদের স্মরণেই সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও একটি নির্দিষ্ট দিনে অর্থাৎ আজ যথাযোগ্য মর্যাদা ও শ্রদ্ধার সহিত পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস।
এ বছরের প্রতিপাদ্য হল— “শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি” — যা শিক্ষকদের সম্মান, পেশাগত মর্যাদা ও যৌথ দায়িত্বের গুরুত্বকে সামনে এনেছে।
১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সূচনা হয়। এর আগে ১৯৯৩ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ২৬তম সাধারণ সভায় ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এরপর হতেই বিশ্বের শতাধিক দেশে দিনটি পালন করা হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষা পেশার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে।
শিক্ষক দিবসের এই বিশেষ দিনে স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সামিয়া আসাদী তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন,
আমার কাছে শিক্ষকতা আসলে একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা, কেননা শুধু ক্লাসে আমি পড়িয়ে গেলাম, আমার দায়িত্ব শেষ—আমার মনে হয় এটা না। শিক্ষকের দায়িত্ব আসলে ক্লাসের চার দেয়ালের বাইরে আরো বেশি থাকে। শিক্ষককে আসলে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বুঝতে হয়, তাকে কখনো অনুপ্রেরণা দিতে হয়, কখনো বা শাসনও করতে হয়।
তো এই বিষয়গুলো আমার কাছে মনে হয় যে এই যে মানসিকভাবে একজন শিক্ষার্থীর ভালো-মন্দ বোঝা, তাকে সময় দেওয়া, তার মেন্টরশিপ করা—এই জায়গাগুলোতে নিয়মিত সিলেবাসের বাইরের এই চ্যালেঞ্জিং বিষয়গুলো আসলে শিক্ষক, শিক্ষকতার একটা বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবার একইসাথে এটাই হচ্ছে একজন শিক্ষক হিসেবে বড় প্রাপ্তিরও বিষয়, যখন শিক্ষক দেখতে পান তারই হয়তো বা কোনো পরামর্শে কিংবা তার কোনো মেন্টরশিপে তার শিক্ষার্থীটা ভালো করছে।
সুতরাং, একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে মনে হয় যে আসলে শিক্ষকতার জীবনের এটি একটা বড় প্রাপ্তিও বটে।
এছাড়াও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বৃষ্টি রানি দাস জানান,
“আমাদের শিক্ষকরা শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে পাঠদানেই সীমাবদ্ধ থাকেন না, জীবনের মূল্যবোধও শেখান, অনুপ্রেরণা জাগান কিভাবে জীবনের সকল বাধা-বিপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তীক্ষ্ম গতিতে এগিয়ে অসীমতাকে নিজের ঝুলিতে আপন করে নেওয়া যায়। তাঁদের অনুপ্রেরণায় আমরা স্বপ্ন দেখি, এগিয়ে যাওয়ার সাহস পাই।”
দিবসটিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক সংগঠনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে র্যালি, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি শিক্ষকদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত—যা স্মরণ করিয়ে দেয়, আলোকিত সমাজ গড়তে প্রথম শর্তই হলো একজন অনুপ্রেরণাদায়ী শিক্ষক।