সোহেল রানা
ঢাকার সাভারে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে দলবল নিয়ে এক সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা, হামলা, মারধর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ৬ টার দিকে সাভারের উত্তর রাজাসন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
এ ব্যাপারে বুধবার দুপুরে সাভার মডেল থানায় ওই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জমির মালিক আশা রোজারিও।
লিখিত অভিযোগে সাভার পৌরসভার উত্তর রাজাশন এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে ও সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শফিউল বাশার (৪৩) এবং একই এলাকার এলিক কোড়াইয়ার ছেলে সুবাস কোড়াইয়ার(৫৯) নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে সাভারের খ্রিস্টান অধ্যুষিত উত্তর রাজাশন এলাকার মন্টু কোড়াইয়ার স্ত্রী আশা রোজারিও ও তার স্বজনদের জমি দখলের চেষ্টা করে আসছে সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শফিউল বাশার।
বুধবার সকালে শফিউল বাশার ও এলিক কোড়াইয়ার নেতৃত্বে তাদের লোকজন এসে বাউন্ডারি ওয়ালের প্রধান ফটক ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে আশা রোজারিও ও তার স্বজনদের জমি দখলের চেষ্টা চালায়। সন্ত্রাসীরা জমির ভিতরে টিনের বেড়া দেওয়ার চেষ্টা করে, তিনটি মিনি পোশাক কারখানা ও গোডাউনের তালা ভেঙে ফেলে এবং টিনশেড বসতবাড়ির দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে হামলা ও ভাঙচুর চালায়, মালামাল লুটপাট করে। এ সময় তাদের বাধা দিলে বাদীর ভাতিজার স্ত্রী রিতা কোড়াইয়াকে তারা শ্রীলতাহানিসহ মারধর করে। আহত রিতাকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ দায়েরের পর আশা রোজারিও বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শফিউল বাশার তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। অপচেষ্টার অংশ হিসেবে আমাদের আত্মীয় সুবাস কোড়াইয়ার মা নির্মলা কোড়াইয়াকে দিয়ে আদালতে মামলা করিয়েছে। আদালতে পরাজিত হয়ে এখন তারা সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। থানায় লিখিত অভিযোগ করার পরও তারা পুনরায় হামলার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। বর্তমানে তারাসহ প্রায় ৫০টি ভাড়াটিয়া পরিবার সন্ত্রাসীদের দেওয়া তালার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে আছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে সাভার পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শফিউল বাশার বলেন, সুবাস কোড়াইয়ার মা নির্মলা কোড়াইয়ার কাছ থেকে ২০১৪ সালে আমি ২০ শতাংশ সম্পত্তি ক্রয় করেছি। আমি যতটুকু জানি ওয়ারিশ সূত্রে তারা ৮৯ শতাংশের মালিক। তবে তাদের ওয়ারিশ হিসেবে বঞ্চিত করতে চাইছেন আশা রোজারিওসহ অন্যরা।
আদালতে মামলা দায়ের করে পরাজিত হয়ে ৯০ শতাংশ সম্পত্তি দখল চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিআরএস রেকর্ড আশা রোজারিওদের নামে হয়েছিল। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করে আমি ২০ শতাংশের রায় পেয়েছি। এখন তারা আবার সেটা নিয়ে আপিল করেছে।
বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তি হয়নি তবে কেন আপনি দখল চেষ্টা করছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেউ যদি পায়ে পাড়া দেয় তবে তাহলে কি করার আছে, সম্পত্তি রক্ষার জন্য যা কিছু করার আছে, তাই করা প্রয়োজন।
অভিযুক্ত সুবাস কোড়াইয়ার কাছে পরিচয় দিয়ে ঘটনার বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২ মিনিট পর কল দিচ্ছি। এই বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন এবং পরে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও আর কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান জানান, সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল চেষ্টার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে বলা হয়। আমরা যাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুদীপ কুমার গোপ জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বা বু ম/ এস আর