সোহেল রানা
ঢাকার সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে গড়ে ওঠা একটি বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর ইয়াসমিন ওরফে ঝুনু (২৮) নামে এক প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তবে বেঁচে আছে নবজাতক।
সোমবার সন্ধা ৭ টার দিকে থানা রোডের সেবা ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার জয়মন্ডব ইউনিয়নের চরনয়াডাঙি কাজীপাড়া এলাকার কাজী মহিদুর আরাফাতের স্ত্রী এবং ধামরাই উপজেলার চরসঙ্গুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে ইয়াসমিন ওরফে ঝুনুকে সোমবার ৮ এপ্রিল বিকেলে সাভার থানা রোডের সেবা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সন্ধা ৭ টায় ডা: বিলকিস লায়লা গৃহবধূ ইয়াসমিন ওরফে ঝুনুকে সিজারিয়ান অপারেশন করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তার একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, সন্তান জন্ম নেওয়ার দীর্ঘ সময় পার হলেও ইয়াসমিন ওরফে ঝুনুকে রহস্যজনক কারণে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হচ্ছিল না। শেষে রাত ১২টার দিকে গৃহবধূ ইয়াসমিনকে ওটি থেকে অচেতন অবস্থায় বের করে স্বজনদের না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সেবা ক্লিনিকের কর্মকর্তারা। এনাম মেডিকেলে নেওয়ার পর কৌশলে রোগীর স্বজনদের খবর দিয়ে তাদের মাধ্যমে ইয়াসমিনকে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনার পর পরই হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান ক্লিনিকটির কর্মকর্তারা।
এ ঘটনা জানতে সেবা ক্লিনিকে গেলে স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে কর্তৃপক্ষ পালিয়ে যায়। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সেবা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী মোবারক জানান, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি এবংকি ইয়াসমিন ওরফে ঝুনু নামে কোন প্রসূতি রোগী আমাদের ক্লিনিকে আসেনি।
তবে সেবা ক্লিনিকের রিসিপশন থেকে দেলোয়ার হোসেন এবং স্বপন জানান, সেবা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী মোবারকের মাধ্যমে প্রসূতি ইয়াসমিন ওরফে ঝুনুকে গত ৮ এপ্রিল ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রোগীকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বুধবার ১০ এপ্রিল সকালে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এ সময় তারা দুজনেই সাংবাদিকদের সামনে ডা: বিলকিস লায়লার সুনামের গল্প ঢেলে দেন।
সেবা ক্লিনিকের কর্মচারীদের এত সুনামের পর এ ব্যাপারে ডা: বিলকিস লায়লার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের পরিচয় পেয়েই তিনি কলটি কেটে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে আর পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) প্রধান ডা: রেজাউল হকের তত্ত্বাবধানে আইসিইউর ১৪ নং বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইয়াসমিন ওরফে ঝুনুর মৃত্যু হয়।
এনাম মেডিকেল সূত্র জানায়, সেবা ক্লিনিকে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনের পর ইয়াসমিনের অবস্থার অবনতি হয়। অতিরিক্ত ক্রাইসিস সময়ে এনাম মেডিকেলে তাকে আনা হয়। ভর্তির আগেই রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। বিষয়টি দায়িত্বরত চিকিৎসকরা স্বজনদের জানিয়েই লিখিত নিয়ে সোমবার গভীর রাতে রোগীকে ভর্তি নেয়। বুধবার সকালে রোগীর মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে বলা যায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়েছে। তবে ভুল চিকিৎসায় হয়েছে কিনা তদন্ত করলে জানা যাবে।
রোগীর স্বজন রুবেল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সেবা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী মোবারক একসময় ছিলেন রোগীর দালাল। তার জড়াজড়িতেই ওই হাসপাতালে ইয়াসমিনকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আমরা জানতে পারি তিনি ওই হাসপাতালে একটি শেয়ার কিনে মালিক হয়েছেন। আমরা পারিবারিকভাবে আলোচনার পর কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিব।
এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
বা বু ম/ সুমন রায়