স্টাফ রিপোর্টার-
কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন থানার একাধিক হত্যা মামলা, অস্ত্র মামলা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক, ডাকাতিসহ সর্বমোট ৯ টি মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক চিহ্নিত চরমপন্থী সদস্য খায়রুল ইসলাম গাইন (৩৫)’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন খাগান এলাকা থেকে র্যাব -৩ এর একটি আভিযানিক দল তাকে গ্রেফতার করে।
আজ (২৬ মার্চ) সকালে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃত আসামী কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অধিনায়ক জানান, সে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ জেলার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নামে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ড থানা ও শৈলকুপা থানা, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় হত্যা, অপহরণ, অস্ত্র আইন, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।
সে বিগত ২০১১ সালের নভেম্বরে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার অন্তর্গত পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজা (৪০)’কে ট্যাটা দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ৪২ বিঘা সরকারী খাস জমির দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। এরপর ২০১২ সালে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায় আরেকটি হত্যা মামলার দায়ে সে অভিযুক্ত হয়।
তিনি আরও জানান, ২০১২ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার এক অস্ত্র মামলায় গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন পুনরায় অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়। উভয় মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সে ২১ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। ২০১৮ সালে কুষ্টিয়া জেলার বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০১২ সালের অস্ত্র আইনের মামলায় তাকে ১৭ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। জামিনে থাকা অবস্থায় ২০১৫ সালে ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ড থানায় তার নামে একটি অপহরণ মামলা দায়ের হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হরিণাকুন্ড থানাধীন বাগচোয়া লক্ষীপুর গ্রামের জনৈক মিন্টু মালতের ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়। এছাড়াও ২০১৬ সালে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার বিজয় কুমার দাসের ছেলেকে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আরেকটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়।
এছাড়া ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় অস্ত্র আইনে পৃথক একটি মামলা হয়। অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ ডাকাতির প্রস্তুতি কালে হাতেনাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে ১৯ মাস জেল খেটে ২০১৯ সালে জামিনে মুক্ত হয়। ২০২০ সালে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত ওই মামলায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও জানান, কুষ্টিয়া জেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানাধীন পশ্চিম আব্দালপুরে চরমপন্থী সদস্য কালু মিয়া সম্পর্কে তার চাচা হয়। ২০০৯ সালে চরমপন্থী কালুর নেতৃত্বে কুষ্টিয়া সদর থানাধীন এলাকায় দেহ থেকে মাথা কেটে তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন চরমপন্থী কালুর অত্যন্ত বিশ্বস্ত সহচর ছিল। ২০১০ সাল থেকেই কালুর সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। হত্যাকান্ডের পর সে আরও কালুর নিকটে চলে যায়। ২০১৭ সালে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত যখনই সে জেলের বাইরে থাকতো তখনই সে কালুর সহচর হিসেবে দুষ্কর্মে সহযোগিতা করে আসছিলো। সে কালুর সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায়ে অংশগ্রহণ করতো। সে পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত চরমপন্থী সদস্যদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতো।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি ২০১৯ সালে জামিনে মুক্ত হয়ে ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন খাগান এলাকায় এসে আত্মগোপন করে। সেখানে সে নিজের প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন করে ছদ্মনাম ও পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি স্বনামধন্য এগ্রো প্রতিষ্ঠানের গরুর ফার্মে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সে আর কখনো কুষ্টিয়ায় নিজ গ্রামে ফেরত যায়নি। সে স্ত্রীসহ দুই ছেলেকে নিয়ে খাগান এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
জানা যায়, গ্রেফতারকৃত খায়রুল গাইন লেখা পড়া না জানায় ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তার বাবা মৃত জবেদ আলী ১৯৯৬ সালে নিজ গ্রামের দুই পক্ষের কোন্দলে ট্যাটার আঘাতে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হয়। এরপর থেকেই সে চাচাদের সহযোগিতায় বেড়ে উঠে। ২০১৭ সালে গ্রেফতার হওয়ার আগে গ্রামে কাঁচামালের ব্যবসা করতো।
তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।