স্টাফ রিপোর্টার-
টাঙ্গাইল পৌরসভার এক স্টাফের বিরুদ্ধে এক প্রতিবন্ধি কিশোরীর ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় তিন বছর যাবৎ ওই টাকা আত্মসাৎ করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সম্প্রতি বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় তিনগুণ বেশি টাকা দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে ম্যানেজ করার আশ্বাসসহ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মড়িয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু চক্রের লোকজন। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের।
অভিযুক্তের নাম মেহেদী (২২)। সে টাঙ্গাইল পৌরসভার পানি সরবরাহ কেন্দ্র ১ এ নলকূপ মিস্ত্রি পদে কর্মরত এবং টাঙ্গাইল পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবি মিয়ার ছেলে ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেনের ভাতিজা। অভিযুক্ত মেহেদীর বাবা রবি মিয়া কাউন্সিলর ফারুক হোসেনের ফুফাতো ভাই বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগের সত্যতা জানতে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধী কিশোরী লাবনী আক্তারের বাড়িতে গেলে সে
তার নিজ নামে উত্তোলনকৃত ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত টাঙ্গাইল পৌরসভার জন্মসনদ ব্যতিত দেখাতে পারেননি প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড। এ সময় কিশোরীর চাচা, চাচী উপস্থিত থাকলেও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। এছাড়াও তার বাবা লাল মিয়াকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
জেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্র জানায়, মাসে ৮৫০ টাকা হারে প্রতিবন্ধি ভাতা দেয়া হয়। তিন মাস অন্তর অন্তর ভাতাভোগীর নগদ একাউন্টে ২৫৫০ টাকা নিয়মিত প্রদান করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরই অলোয়া তারিনীর লাল মিয়ার বাক প্রতিবন্ধি কিশোরী মোছা. লাবনী আক্তারের প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ডটি করে দেন ফারুক হোসেন। পৌরসভায় চাকুরী আর উভয়েই কাউন্সিলরের আত্মীয় হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রতিবন্ধির ভাতার কার্ডটি করার সকল দায়িত্ব নেন অভিযুক্ত মেহেদী। তবে ভাতার কার্ডটি এখনও পাননি প্রতিবন্ধির পরিবার। সম্প্রতি অফিস মাধ্যমে প্রতিবন্ধি কিশোরীর ভাতার কার্ড অনুমোদন ও ভাতাপ্রাপ্তির বিষয়টি প্রকাশ পায়। কৌশলে মেহেদী প্রায় তিন বছর যাবৎ ওই ভাতার টাকা আত্মসাৎ করে আসছে বলে প্রতিবন্ধির বাবা লাল মিয়া স্থানীয়দের অবগত করেন। ঘটনাটি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় লোকজন তিনগুণ টাকা জরিমানা নিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে অভিযোগটি ধামাচাপা দেন। এরপর থেকেই ভাতার টাকা নিয়ে আর কোন আলোচনা করছেন না প্রতিবন্ধি কিশোরীর বাবা লাল মিয়া। মেহেদী প্রতিবন্ধি কিশোরীর প্রায় অর্ধলাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা লিটন মিয়া বলেন, পৌরসভার স্টাফ মেহেদী প্রতিবন্ধি লাবনীর টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মেহেদী কাউন্সিলরের সমর্থক। আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত দেয়াসহ মেহেদীর কঠোর শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত মেহেদী’র মুঠোফোনে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অভিযোগটি কে দিয়েছেন” ঘটনাটি সত্য কিংবা মিথ্যা এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।
এদিকে ভুক্তভোগী প্রতিবন্ধি পরিবার ও অভিযুক্তসহ স্থানীয়দের সাথে এ প্রতিবেদক অনুসন্ধান করার কারনে “ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেন। তিনি সহ একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল সরকার ও ট্রাক শ্রমিক নেতা শাহীনসহ বেশ কয়েকজন মিলে প্রতিবেদক’কে চাপ প্রয়োগ করে অভিযোগকারীর নাম জানার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে কাউন্সিলর সহ অন্যান্যরা উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদকে চাঁদাবাজ বলে আক্ষায়িত করেন । এসময় কাউন্সিলর মো. ফারুক হোসেন স্থানীয়ভাবে অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে জরুরী ভিত্তিতে ভুক্তভোগীর নগদ একাউন্ট পরিবর্তন করার জন্য শহর সমাজ সেবা কর্মকর্তা বরাবর যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন টাঙ্গাইল সমাজ সেবা উপ-পরিচালক শাহ আলম। এছাড়াও অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে সামাজিক নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করতেও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীকে সমাজ সেবার মাধ্যমে সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র “এস.এম.
সিরাজুল হক আলমগীর জানান, এ বিষয়টি তিনি এখনো অবগত নন। তবে প্রতিবন্ধির ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে অভিযোগটি অধিকতর তদন্ত ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।