1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকাবাসীকে নিরাপত্তা প্রদানের মহান দায়িত্বে পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই-ডিএমপি কমিশনার আজ ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল সবজি, পেঁয়াজ ও মুরগির দাম কমলেও, কমেনি আলুর দাম ঘোষিত হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ডিএমপি কমিশনার মোঃ সাজ্জাত আলীর দায়িত্বভার গ্রহণ নতুন পুলিশ প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে জনগণই সকল ক্ষমতার মালিক হবেন- প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা ও খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ ঢাকা মহানগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষেই দ্রুত সম্ভব নির্বাচন সংঘটিত হবে-আইন উপদেষ্টা

সমস্য সমাধানে দরবেশ বাবা’র খপ্পরে পড়ে ২৫ লাখ টাকা খোয়ালেন চিকিৎসক

  • সময় : সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭৩

স্টাফ রিপোর্টার- ফেসবুকে চোখ ঝলসানো বিজ্ঞাপন পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে চাটুকদাট কথার মাধ্যমে কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় একটু চক্র। কখনো মসজিদে নববীর ইমাম, কখনো দরবেশ বাবার পরিচয়ে জীবনে সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এ চক্রটি প্রায় ৪ বছর ধরে সহজ সরল মানুষের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছিল।

একজন নারী চিকিৎসক এই চক্রের খপ্পড়ে পড়ে ২৫ লক্ষ টাকা খোয়ান। পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা থাকায় পরিত্রাণ পেতে ২০২৩ সালে আমেনা খান নামে এক চিকিৎসকের ঘটনাচক্রে পরিচয় হয় কথিত দরবেশ বাবার সঙ্গে! পারিবারিক সমস্যা সমাধানের আশায় কথিত দরবেশ বাবা’র হাতে তুলে দেন টাকা।

প্রতারণা বিষয়টি বুঝতে পেরে গত বছরের ৭ নভেম্বর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী নারী। মামলার সূত্র ধরে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তের এক পর্যায়ে রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) চক্রের অন্যতম সদস্য আশিকুর রহমানকে মাগুরা থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে চক্রের আরো ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলো— মো. মনিরুজ্জামান ওরফে আদর, মো: ফকরুল (২৫), মো.সাদ্দাম (২৬), মো. নিরব, (৫) মো.সিহাব (২৩), মো. সাব্বির (১৮), মো. সাগর (৩৩), মো.শাহিন (২৩), মো.কামাল (২৮), মো. আক্তার (৩৩), মো.শরীফ (২১), মো.নীরব (২১), মো.বাবলু (২৪), মো. মিজান (৩২),  মো. রাসেল (৩০), মো. নূর হোসেন কালু (২৯), মো. সোহেল (২২), মো. নয়ন (২৬) ও মো. নীরব (৩৬)।

সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের সিআইডির সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, দরবেশ বাবা পরিচয়দানকারী এই চক্রের ১৯ সদস্যকে মাগুরা ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে প্রতারণা করে আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে ২টি ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে। প্রতারকরা দৈবচয়নের মাধ্যমে বা ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত অথবা অর্থ সম্পদশালী ব্যক্তিদের দারোয়ান বা চালকের সঙ্গে সম্পর্ক করে প্রথমে। পরে চালক ও দারোয়ানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিবারের গোপন তথ্য সংগ্রহ করে। এসময় তারা পারিবারিক সমস্যাগুলো কৌশলে জেনে নিয়ে একই বাড়ির মালিক ও স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে। তারপর শুরু করে প্রতারণার খেলা। স্ত্রীর কাছে স্বামীর বদনাম এবং স্বামীর কাছে স্ত্রীর বদনাম বলে কান ভারী করে। তখন উভয়ের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং প্রত্যেকে তাদের সমস্যা নিরসনের জন্য পথ খুঁজতে থাকে। এই সুযোগে প্রতারকরা মসজিদে নববীর ইমামের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করতে থাকে।

তিনি বলেন, চক্রটির দ্বিতীয় কৌশল হলো গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চমকপ্রদ এবং চোখ ঝলসানো বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রলুব্ধ করা হয়। লটারি পাইয়ে দেওয়া, ভাগ্য-বদল, পাওনা টাকা আদায়, মামলায় জেতানো, পারিবারিক সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয় তাদের বিজ্ঞাপনে। আধ্যাত্মিক ও তান্ত্রিক ক্ষমতা বলে বিপদগ্রস্ত মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবে এমন বিজ্ঞাপন দিতো চক্রটি। এসব বিজ্ঞাপন দেখে কোনো ভুক্তভোগী তাদের ফোন দিলে শুরু প্রতারণা। নানা কৌশলে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো।

সিআইডি প্রধান বলেন, এভাবেই চক্রটি পারিবারিক সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার কথা বলে এক নারী ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ‘দরবেশ বাবা’ পরিচয়ে কয়েক ধাপে তার কাছ থেকে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

খিলগাঁও থানায় দায়ের করা একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি। ভুক্তভোগী ওই নারী পারিবারিক সমস্যা থাকায় মুক্তির পথ খুঁজছিলেন। এ অবস্থায় ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপন দেখে তার চোখ আটকে যায়। বিজ্ঞাপনে একজন সুদর্শন ব্যক্তি দরবেশ বেশধারী নিজেকে সৌদি আরবের মসজিদে নববীর ইমাম পরিচয় দিয়ে বলছেন, তিনি কোরআন হাদিসের আলোকে মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করেন। বিজ্ঞাপনটি মন কাড়ে ওই নারী চিকিৎসকের। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞাপনে দেওয়া মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন তিনি। অপরপ্রান্তে থাকা দরবেশ বাবা বেশধারী ব্যক্তি সুন্দরভাবে কথা বলে তার পারিবারিক সমস্যা শুনতে চান। ভুক্তভোগী চিকিৎসক তার পরিবারের সমস্যার কথা তুলে ধরেন কথিত দরবেশ বাবার কাছে। সমস্যার কথা শুনে দরবেশ তাকে বলেন, ‘মা তোমার সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। বাবার ওপর আস্থা রাখ। তোমাকে মা বলে ডাকলাম। আজ থেকে তুমি আমার মেয়ে। তবে কিছু খরচ লাগবে। খরচের কথা কাউকে জানানো যাবে না। জানালে সমস্যার সমাধান তো হবেই না, বরং সমস্যা আরো বাড়বে এবং তোমার ছেলে-মেয়ে ও স্বামীর ক্ষতি হবে।’ 

নারী চিকিৎসক ভণ্ড দরবেশের কথায় তার ভক্ত হয়ে যান। এরপর থেকে ধাপে ধাপে অলৌকিক সমস্যার কথা বলে প্রলোভন ও ভয়-ভীতির মাধ্যমে মোট ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই প্রতারক চক্র।

পরবর্তী সময়ে এমএফএস নম্বরের সূত্র ধরে মাগুরা জেলা থেকে আশিকুর রহমান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সে এই চক্রের প্রধান। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের বিভিন্ন টেকনিক্যাল সাপোর্ট, বেনামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দেওয়ার কাজ করে সে। পরে আশিকুরের দেওয়া তথ্যমতে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে কথিত দরবেশ পরিচয়দানকারী ১৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ২০২০-২১ সাল থেকে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। প্রথম দিকে তারা বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দিতো। পরে তারা পত্রিকা এবং বিভিন্ন চ্যানেলের পাশাপাশি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার বিজ্ঞাপন দিতে থাকে। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ তাদের দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে সমস্যা সমাধানের নামে ভয়-ভীতি ও নানা প্রলোভন দেখিয়ে এমএফএস নম্বরে টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি।

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ৪১টি মোবাইল, বিপুল সংখ্যক সিমকার্ড ও ডিজিটাল আলামত উদ্ধার করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪