স্টাফ রিপোর্টার-
সম্প্রতি বিদায় নিয়েছে পুরনো বছর ২০২৩। বিদায়ী বছরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মোট ৩৪৯ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটিলিয়ন(র্যাব)।
সেই সঙ্গে ২০১৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে কিশোর গ্যাংয়ের ১হাজার ১২৬ জন সদস্যকে র্যাব গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৩০ জনকে অর্থদন্ড এবং ১০ জনকে মুচলেকা নিয়ে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (১০জানুয়ারি) সন্ধায় র্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বিশ্বের পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্যাং ও কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের কিশোররা বিদেশী এই গ্যাং কালচার রপ্ত করে কয়েক দশক পূর্বে। শুরুতেই সন্ত্রাসী ভাবমূর্তি না থাকলেও ধীরে ধীরে কিশোর গ্যাং সদস্যরা সন্ত্রাসী ভাবাপন্ন হয়ে উঠে। গ্যাংয়ে-গ্যাংয়ে দন্দ, অন্তকোন্দল, চাঁদাবাজি, এলাকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও মাদক সিন্ডিকেটে জড়িত। এহেন নানাবিধ হত্যাকান্ড, সংঘাত ও অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ভবিষ্যত জীবন নষ্ট করছে। শুরুতেই ঢাকা কেন্দ্রিক থাকলেও পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়ে গ্যাং কালচার।
তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট খাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনোখুনি করে। এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রপের সাথে প্রায়ই কোন্দলে করে থাকে। এই আধিপত্যের বিষয়টিকে তারা তাদের ক্ষমতা হিসেবে ভাবে এবং কোন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
এক বছরে উল্লেখযোগ্য ঘটনায় গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে তিনি জানান, গত ২৮ জানুয়ারি রাতে রাজধানী আদাবরের সন্ত্রাসী গ্রুপে “বিডিএসকে” গ্যাং এর প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ ৮ জন সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গত ২৯ জানুয়ারি “কিশোর গ্যাং” লিডার জালাল ওরফে পিচ্চি জালাল বাহিনীর ১৬ সদস্যকে, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০ সদস্যকে, ২২ মার্চ ৪৩ জন সদস্যকে, ২৮ এপ্রিল রাজধানীর আশুলিয়ার চাঞ্চল্যকর লিখন হত্যাকান্ডের পলাতক আসামি কিশোর গ্যাং সদস্য অনিক (২০) এবং জোবায়ের (১৯)’কে, ২৬ মে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকার চাঞ্চল্যকর সিয়াম (১৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও চিহ্নিত আসামি কিশোর গ্যাং লিডার পটেটো রুবেল ও তার সহযোগী রকি’কে, ১৬ জুন “নুরু গ্যাং” গ্যাং গ্রুপের প্রধান মাহিদুল ইসলাম সুজন ও তার ৩ সহযোগীকে, ১৬ জুলাই ‘‘পিচ্ছি জয়” গ্রুপের ৩ জন সদস্যকে, ৮ সেপ্টেম্বর “স্যুটার আনোয়ার” গ্রুপের সদস্য রাফাত, তুষার আহমেদসহ ০৭ জনকে, ২৮ নভেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১২ জন এবং ছিনতাই এর প্রস্তুতিকালে ১২ জন ছিনতাইকারীসহ কিশোর গ্যাংয়ের মোট ২৪ জনকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে উত্তরায় স্কুল ছাত্র আদনান হত্যাকান্ডের মাধ্যমে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি আলোচনায় আসে। চাঞ্চলকর এই হত্যাকান্ডের মূলহোতাসহ বেশ কয়েকজন কিশোর গ্যাং সদস্যদের গ্রেফতার করে র্যাব। পরবর্তীতে উত্তরা, গাজীপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় স্কুল ছাত্র শুভসহ আরো কয়েকটি হত্যাকান্ড ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। কিশোর গ্যাং নামক অপসংস্কৃতি রোধকল্পে র্যাব এই সকল হত্যাকান্ডের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসামীদের গ্রেফতার করে।