স্টাফ রিপোর্টার-
গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুরের কালশী এলাকায় বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ৪ জন অগ্নিসংযোগকারীকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আল মোহাম্মদ চাঁন (২৭), মো. সাগর (২৫), মো. আল আমিন ওরফে রুবেল (২৯) ও মো. খোরশেদ আলম (৩৪)।
র্যাব জানায়, বাসে আগুন দেওয়ার জন্য গ্রেফতার চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সে গ্রেফতার সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে প্রদান করে। চাঁন বাসে আগুন দেয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভরে ওইদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেয়।
গতকাল সোমবার রাতে র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর মিরপুর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগকারী চারজনকে গ্রেফতার করে।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা বিরোধী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। তাদের দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের নিদের্শনায় গ্রেফতার আল মোহাম্মদ চাঁন রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবীর আশপাশের এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ করার পরিকল্পনা করে।
পরবর্তীতে গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গ্রেফতার চাঁন ও তার সহযোগী সাগর ও আলামিন ওরফে রুবেলসহ রাজধানীর মিরপুর-১১, তালতলা নাভানা, কালশী রোড ও সিরামিক রোড এলাকায় সুবিধাজনক স্থানে সুবিধামতো সময়ে যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রেকি করে।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার আল মোহাম্মদ চাঁন যানবাহনে আগুন দেয়ার জন্য তার বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ২৫০ এমএল পরিমাণ পেট্রোল বের করে টাইগার এনার্জি ড্রিংকের বোতলে ভরে ওইদিন সন্ধ্যায় আল আমিনের কাছে দেয়। পরবর্তীতে গ্রেফতাররা ওই দিনেই আবার রাত ১১টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগ করার জন্য রাজধানীর কালশী সড়কে রেকি করে।
তিনি বলেন, এসময় কালশী সড়কে মসজিদের পাশে পার্ক করা বসুমতি পরিবহনের একটি বাস সুবিধাজনক হওয়ায় গ্রেফতার চাঁনের নির্দেশে সাগর ও আল আমিন বাসের কাছে যায় এবং আল আমিন বাসের মাঝের জানালা খুলে পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং ঘটনাস্থল থেকে সাগরের সঙ্গে পালিয়ে যায়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এসময় গ্রেফতার চাঁন রাস্তার আইল্যান্ডের উপরে দাঁড়িয়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের নির্দেশনা প্রদান ও ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে। অন্য কোনো বিরোধীদলের সদস্যরা যাতে এ ঘটনার ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে কৃতিত্ব নিতে না পারে সেজন্য গ্রেফতার চাঁন বাসে আগুন দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খোরশেদকে ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ধারণ করে তাৎক্ষণিক তাকে পাঠাতে বলে।
পরবর্তীতে গ্রেফতার চাঁন ধারণকৃত ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের কাছে প্রেরণ করে। এ কাজের জন্য গ্রেফতার চাঁন প্রত্যেকের জন্য ১০ হাজার টাকা করে পেলেও সে গ্রেফতার সাগর ও আল আমিনকে ৭ হাজার টাকা করে প্রদান করেছে।
মূলত দলের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি ও দলের প্রতি নিজেদের আস্থার প্রতিদান দিতে তারা এ সকল নাশকতা ও সহিংসতার ভিডিও ধারণ করে তাদের দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে প্রেরণ করতো।
কমান্ডার মঈন বলেন, এছাড়াও নাশকতার এ সকল ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করে তাদের সমমনা অন্যান্য অনুসারীদের নাশকতা সৃষ্টিতে প্ররোচিত করতো। পরবর্তীতে স্থানীয় শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার চাঁনকে আবারও ২১ নভেম্বর সন্ধ্যায় একইভাবে সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি পোড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছিল।
উল্লেখ্য, গ্রেফতাররা গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিরোধী একটি দলের মহাসমাবেশে অংশগ্রহণ করে পল্টন এলাকাসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন, ব্যক্তিগত পরিবহন, সরকারি পরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গেও জড়িত ছিল।
গ্রেফতার আল মোহাম্মদ চাঁন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের নির্দেশে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় যানবাহনে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, নাশকতা ও সহিংসতার পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বে দেয়। এছাড়াও সে নাশকতা ঘটানোর জন্য সমর্থকদের কাজ ভাগ করে দিতো ও টাকা সংগ্রহ করে সকলের মাঝে বিতরণ করতো।
গ্রেফতার মো. সাগর চাঁনের সহযোগী। সে গ্রেফতার চাঁনের নির্দেশে নাশকতার জন্য সুবিধাজনক টার্গেট ও স্থান রেকি করে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পাদন করে।
গ্রেফতার মো. আল আমিন ওরফে রুবেল গ্রেফতার চাঁনের সহযোগী ও গ্রেফতার সাগরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্লবী থানায় মাদক সংক্রান্ত দুটির বেশি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার খোরশেদ আলম চাঁনের সহযোগী। সে চাঁনের নির্দেশে রাজধানীর কালশী সড়কে বসুমতি পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ছবি তুলে ও ভিডিও ধারণ করে চাঁনকে প্রেরণ করে।
এছাড়াও সে রাজধানীর মিরপুর এলাকার যেকোনো প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন নাশকতা এবং সহিংসতার ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ এবং এসকল ভিডিও চাঁনের মাধ্যমে দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের কাছে প্রেরণ করে।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।