বিএনপি’র গত ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশে পুলিশ সদস্য আমিরুল হত্যার ঘটনায় হামলায়
নেতৃত্বদানকারী প্রধান আসামী আমান উল্লাহ আমানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধায় আমানকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানান সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার আসাদুজ্জামান। pp
তিনি বলেন, বিএনপির ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে পুলিশের উপর বর্বরোচিতl হামলায় পুলিশ সদস্য
কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে হামলায় নেতৃত্বদেন আটককৃত বিএনপি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মোঃ আমান উল্লাহ আমান।
গ্রেফতারকৃত আমান’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, সমাবেশের দিন বিএনপি এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে সে তার অনুসারীদের নিয়ে নয়াপল্টন কেন্দ্রিক মঞ্চের পাশে অবস্থান নেয়। মঞ্চে অবস্থিত বিএনপির এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রিয় নেতাদের নির্দেশনা ছিল পুলিশের উপর বর্বরোচিত ও নৃশংস হামলার মাধ্যমে পুলিশের মনোবল ভেঙ্গে দেতে। প্রয়োজনে এক বা একাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা, যাতে করে একটি
নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হয়।
এদিন কাকরাইলে সমাবেশে উপস্থিত বিএনপি কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করলে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। কাকরাইলে সংঘর্ষের সুযোগ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের হাইকমান্ড নেতাদের নির্দেশে
নয়া পল্টনস্থ বিএনপি পার্টি অফিসের পাশে ভিক্টরি হোটেলের পাশের গলি দিয়ে সে ছাত্রদলের একটি বড় অংশ নিয়ে পুলিশের উপরে হামলা করার জন্য অগ্রসর হয়। সমাবেশ কেন্দ্রিক দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের অবস্থান সম্পর্কে পূর্ব থেকেই তাদের জানা ছিল। সে তার দলবল নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। পল্টন টাওয়ারের সম্মুখে এসে অগ্রসরমান দলের একটি অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে বিজয় নগর পানির ট্যাংকির দিকে যায় এবং অপর অংশটি তার নেতৃত্বে বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব প্রান্তের দিকে অগ্রসর হয়। বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছানোর পরে ছাত্রদলের কর্মীরা সেখানে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের উপরে অতর্কিত হামলা করে। এ হামলার প্রেক্ষিতে বক্স কালভার্টের পশ্চিম প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদেরকে সাহায্য করার অভিপ্রায়ে পূর্ব প্রান্তের পুলিশ সদস্যরা বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়। পশ্চিম দিকে অগ্রসরমান পুলিশ দলটির উপরে তার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় হামলা শুরু করে।
তিনি বলেন, ছাত্রদলের এই অংশটি আমানের নেতৃত্বে পুলিশদের উপরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছাত্রদলের আক্রমণ প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জানমাল রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য পুলিশ সদস্যরা জীবনহানিকর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে এবং সর্বোচ্চ সহনশীলতার পরিচয় দেয়। এই পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের একটি বড় অংশ বক্স কালভার্ট রোডের পূর্ব দিকে অবস্থিত ডিআর টাওয়ার ও আশেপাশের স্থাপনায় অবস্থান নেয়। এমতাবস্থায় তার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশ সদস্যদের হামলা করার জন্য ক্রমাগত ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। নিক্ষিপ ইটের আঘাতে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ রাস্থায় লুটিয়ে পড়ে গেলে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্যে লাঠি দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করতে থাকে।
এসময় কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে এবং রক্তাক্ত অবস্থায় নিথর দেহটি রাস্তায় পড়ে থাকে। আমিরুল ইসলাম পারভেজের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। বিক্ষোভকারীরা মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কনস্টেবল পারভেজের নিথর দেহের উপরে বর্বরভাবে আঘাত করতে থাকে। পরবর্তীতে কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের মৃত্যু নিশ্চিত করার পরে সে তার অনুসারীদেরকে নিয়ে বক্স কালভার্ট রোডের পশ্চিম দিক দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
গ্রেফতারকৃত আসামীকে রিমান্ডের আবেদন করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়।