স্টাফ রিপোর্টার-
আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ভূয়া মানোনয়ন বানিজ্যের টার্গেট ছিলো তুষার ওরফে হানিফের। এ জন্য জনভেদে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা দাবি করত সে। এভাবেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নাম ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতো। এরপর যাদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তাদেরকে টার্গেট করতো। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তদবিরের প্রস্তাব দিতো।
তাদের কারোর সঙ্গে দামী গাড়ীতে করে দামী হোটেলে সাক্ষাৎ করতেন। ব্যবহার করতেন অবৈধ অস্ত্র।
জানা গেছে ইতোমধ্যে মনোনয়ন পেতে ১০ থেকে ১১ জন তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তার সাথে।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বা পদোন্নতির আশ্বাস দিয়ে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে বিপুল অংকের অর্থ দাবী করা। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়া, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পদ পাইয়ে দেয়া, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ সহ প্রতারণার মাধ্যমে ৩০ জনের অধিক ব্যক্তিকে চাকুরী পাইয়ে দেওয়া সহ প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অধিক অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এমনই এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর অভিযানে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা আবু হানিফ তুষার ওরফে হানিফ মিয়া (৩৯) নামের ওই প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল, গুলি, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত গাড়ী ও বিভিন্ন ভিডিও এবং এডিট করা ছবি উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি বাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, আবু হানিফ দীর্ঘদিন যাবৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের নিকটাত্মীয় হিসেবে মিথ্যা পরিচয় ও সুসম্পর্কের কথা বলে বিভিন্ন ধরণের প্রতারণা করে আসছিল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনে মনোনয়ন প্রাপ্তির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ দাবী করে আসছিল। এছাড়াও আবু হানিফ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি চাকুরীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে। সে প্রতারণা করার জন্য বিভিন্ন সময় নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতো। এমনকি দেশ ও দেশের বাহিরের বিভিন্ন বেনামী মোবাইল নম্বর প্রধানমন্ত্রীর সে নিজেই অথবা চক্রের অন্য সদস্যদের মাধ্যমে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতো। চ্যাটিং এ তারা আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়া, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ
পরিবারের সদস্যদের নামে মোবাইলে সেভ করতো।
তিনি বলেন, পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন এ্যাপস থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্য সেজে পদে পদায়ন ও পদোন্নতি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দেয়া সংক্রান্ত ও বিভিন্ন অংকের অর্থ দাবী সংক্রান্ত বার্তা নিজেরাই নিজ চক্রের সদস্যদের সাথে আদান-প্রদান করতো। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের সাথে নিজের ছবি এডিট করে বসাতো এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নিকটাত্মীয়ের সাথে সুসম্পর্ক রয়েছে বলে মিথ্যা দাবী করে তা টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে প্রেরণ করতো। সে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তার টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে দেখাতো ও প্রেরণ করতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আবু হানিফ এইচএসসি পাশ হলেও তিনি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে বলে মিথ্যা পরিচয় দিতো। ২০০৮ সালে মটরপার্টস এর ব্যবসার সাথে জড়িত হয়। পরিবহণ সেক্টরে দেশের বিভিন্ন রুটে তুষার এন্টারপ্রাইজ পরিবহন নামে তার বেশ কয়েকটি বাস ও নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য প্রাইভেট কার রয়েছে। সে ঢাকার নাখালপাড়া এবং ধানমন্ডি এলাকায় দলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে বলে মিথ্যা প্রচার-
প্রচারনা চালাতো।
র্যাব জানায়, ২০১৪ সালের পর থেকে একজন সুপরিচিত রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করে। সে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌশলে রাজনৈতিবিদ, উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে নিজের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে পরিচিত হয়। পরে সুসম্পর্ক তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অফিস বা কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে ঘনিষ্ঠ ছবি তুলে এবং প্রতারণার কাজে এই ছবিগুলো ব্যবহার করতো। ২০১৫ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুক একাউন্ট খুলে। বিভিন্ন সময়ে সে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাথে, অনুষ্ঠান, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং দেশের বাহিরে বিভিন্ন সময় ভ্রমণ করে ছবি তুলে তা ফেইসবুকে আপলোডের মাধ্যমে তার ফেইসবুক একাউন্ট এর পরিচিতি ও দেশে-বিদেশে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করে।
এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান স্পন্সর করে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যে আসা, প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমান জমি ও সম্পত্তির মালিক হওয়া, সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক মামলা রয়েছে এবং উক্ত মামলায় একাধিকবার কারাভোগও করেছে এই প্রতারক।