নিজস্ব প্রতিবেদক
কিছু জিনিস তো আমি মস্তাানি কইরাই করি, কি কইবা? হুনো, হুনো (শুনো) তুমরা রেকর্ড কইরা নিয়া যাও। জাহিদ, নাদিম আর মইত্যা চুরারে আমার পোলাপান যেইহানে (যেখানে) পাইবো প্লাস দিয়া টাইন্যা ‘বিচি’ (অন্ডকোষ) ছিড়া হালায়া দিবো। এইডাই আমার প্রক্রিয়া। ওরা কোন সময় কোথায় যায়, কহন কি করে টাইম টু টাইম আমার লোক খবর দেয়। আমি ডিক্লার।
মঙ্গলবার দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে সাভার প্রেসক্লাব বেদখল ও নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা সভায়, সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারন সম্পাদক মঞ্জুুরুল আলম রাজীব তিন সাংবাদিকে উদ্দেশ্য করে এসব কথা বলেন। সম্প্রতি এ ঘটনার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
তিন সাংবাদিক হলেন, বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান, বাংলা ট্রিবিউনের সাভার প্রতিনিধি নাদিম হোসেন ও দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার মতিউর রহমান ভান্ডারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রেসক্লাবের এক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, কয়েক মাস আগে সাভার মডেল কলেজ ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী সাভার প্রেসক্লাবে অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এসময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। পরে তারা ঘন্টাব্যাপি তাগুব চালিয়ে নির্বাহী কার্যালয়ে ‘ওয়াসিল উদ্দিন পাঠাগার’ নামে একটি সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে প্রেসক্লাব দখল করে নেয়। প্রয়াত ‘ওয়াসিল উদ্দিন’ সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীবের বাবা। এ বিষয়ে গত কয়েক মাস ধরে রাজীবের সঙ্গে আলোচনা করেও কোন ফল পায়নি প্রেসক্লাবের সাংবাদিক নেতারা।
মঙ্গলবার দুপুরে সাভার উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে রাজীব বলেন, আমার মনে হয় সমস্যা সমাধানে আমার খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। তবে জাহিদ, নাদিম আর মইত্যা (মতিউর রহমান) চোরারে বহিস্কার করতে হবে। এই তিনজনকে বাদ দিয়া তুমরা আমার কাছে আসো। এসময় সাংবাদিকরা বলেন, গঠণতন্ত্র অনুযায়ী বিনা কারণে আমরা তাদেরকে বহিস্কার করতে পারি না। জবাবে রাজীব বলেন, আমারে যদি প্রক্রিয়া বুঝাও তো প্রক্রিয়া দিয়া করোগা নির্বাচন। এইসব প্রক্রিয়া মিথুনরাও বুঝে, আমিও টুকটাক বুঝি।
এইড্যা কিয়ের লাইগ্যা আমি কইবার যামু? তোমাগো একটু বুঝাই। আমি কইছি, ইলেকশনের দরকার নাই। গোবিন্দ আচার্য্য, জিয়াউর রহমান ও রওশন আমার পরিবাদের সদস্য। কাজেই এই তিনজনকে সিলেকশনের মাধ্যমে নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠন করে দেই। আমার মনে হয় ইলেকশনের আর প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়ে আমি যদি সবাইকে ডেকে বলে দেই তাতে কেউ সাউন্ড করার সাহস পাবে না। এসব ভেবে আমার বাবার নামে সাভার প্রেসক্লাবে যে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিলো কয়েকদিন আগে, আমি সেই সাইবোর্ড নামিয়ে দিয়েছি। আমি এটা না নামাইলে পৃথিবীর কোন শালা নামানোর সাহস পাইতো না। চেয়ারম্যানের এসব কথোপোকথনের অডিও বাংলাদেশ বুলেটিন ডটকম এর হাতে এসেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান বলেন, সাভার উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্য আমি কখনোই আশা করিনি। মন্তব্যের অডিও ফেসবুক দুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় আমার দৃষ্টিতেও এসেছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, বাংলা ট্রিবিউনের সাভার প্রতিনিধি নাদিম হোসেন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের আচরণ আর ভাষা শুনে আমি আশ্চর্য হই। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে সংবাদকর্মীদের প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির পর থেকে আমি ও আমার পরিবাদের সদস্যদেরকে নিয়েও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাংবাদিক বলেন, রাজনৈতিক নেতারা জমি দখল করে। এমন অসংখ্য সংবাদের প্রতিবেদন আমরা করেছি কিন্তু প্রেসক্লাব দখল করে আ.লীগ নেতার বাবার নামে পাঠাগার করার ঘটনা দেশে বিরল।
উল্লেখ্য, দুই বছর আগে করোনাকালীন সময় ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশ হয়। এরপর সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব যুগান্তরের ওই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেয়। এবার প্রকাশ্যে প্লাস দিয়ে ‘অন্ডকোষ’ ছিড়ে ফেলে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।