মোঃ নাজমুল ইসলাম সবুজ শরণখোলা প্রতিনিধিঃ
বাগেহাটের শরনখোলায় স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া এবং সুন্দরবনের শরনখোলা রেঞ্জ ঘেঁষে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত আকাশ নীহা নামে ইকো ট্যুরিজম পার্ক নির্মান করে বিভিন্ন পদে চাকুরী সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে উধাও হয়ে গেছে এনজিও জোয়ারের নির্বাহী পরিচালক আঃ রহমান আকাশ নামের এক প্রতারক। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি কুচক্রী মহল আকাশের নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহন করে সকল তার অপকর্মের সহযোগীতা করায় হাতানো অর্থ নিয়ে খুব সহজেই পালাতে সক্ষম হয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বাসিন্দা আঃ রহমান আকাশ নামের এক যুবক বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলা প্রশাসন পাড়া সংলগ্ন মোঃ মোস্তফা তালুকদারের মালিকানাধীন ভবনের দ্বিতীয় তলায় উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) জোয়ার নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। অসহায় ও দরিদ্রদের মাঝে সল্প সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ৬/৭জন কর্মী নিয়োগ করে সঞ্চয় আদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন মেয়াদী ডিপিএস সহ বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতানো শুরু করেন। কিছুদিন পর আমানতকারীরা ঋন দাবী করলে তালবাহানা শুরু করেন আকাশ। গ্রাহকদের ঋন প্রদান করার জন্য এনজিও জোয়ারের কর্মী মারুফা আক্তার, জোসনা রানী ও আসাদুল ইসলাম সুপারিশ করলে আকাশ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন এবং তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার মুল সনদ আটকে রেখে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এ ঘটনায় মারুফা, জোসনা রানী ও আসাদুল প্রতারক আকাশের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি সহ অসদাচরনের বিষয় উত্থাপন করে ২০২০ সালের ৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে আকাশ ও তার ৩/৪ জন সহযোগী একই বছরের ১ মে জোয়ারের মাঠকর্মী গৃহবধু মারুফা আক্তার (২২) এর বাসায় যায় এবং তার বিরুদ্ধে কেন ইউএনওর কাছে অভিযোগ করা হয়েছে তার কৈফিয়ত চান। এ সময় বাসায় মারুফাকে একা পেয়ে আকাশ ও তার সহযোগীরা লোহার রড় দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। এক পর্যায়ে মারুফা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে সুকৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর প্রতারক আকাশ সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা মারুফা মামলা দায়ের করতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের চাপে তা নিতে গড়িমসি শুরু করেন শরনখোলা থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
অপরদিকে, গৃহবধুকে নির্যাতন ও তার শীল্লতাহানীর ঘটনা নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করলে ঘটনার ৬দিন পর আ. রহমান আকাশ (৩৫) ও তার সহযোগী উপজেলার দক্ষিন আমড়াগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী সোহাগ মৃধার স্ত্রী মিসেস সুমি বেগম (২৫) এবং দক্ষিন তাফালবাড়ী এলাকার বাসিন্দা তুষার মিত্রের মেয়ে সুবর্না মিত্র (৩৫) এর বিরুদ্ধে মারুফার দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ। অন্যদিকে, ঘটনার প্রায় একমাস পর প্রভাবশালী চক্রের সহযোগীতায় আকাশের সহযোগী সুমি বেগম বাদী হয়ে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলে মারুফা আক্তার (২২) ও তার স্বামী জিহাদুল ইসলাম সাব্বির (২৬) সহ জোয়ারের আরেক মাঠকর্মী আসাদুল ইসলাম (২৮) এর বিরুদ্ধে একই থানায় একটি পাল্টা মামলা দায়ের করে।
জোয়ার এনজিওর সাবেক কর্মী মারুফা আক্তার বলেন, আমি ও আসাদুল আকাশের বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করায় আমাদের তিন মাসের বেতন না দিয়ে চাকুরী হতে বাদ দিয়ে দেন। পরে আকাশ তার দল নিয়ে আমার বাসায় গিয়ে হামলা চালায়। চিকিৎসা শেষে শরনখোলা থানায় আমি মামলা করতে গেলে স্থানীয় একটি চক্র আমার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ওই সময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক পত্রিকার মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরায় প্রতারক আকাশের আসল চরিত্র সবাই জানতে পারে। পরে আমার অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন শরনখোলা থানা পুলিশ। আমাদের হয়রানি করতে ঘটনার একমাস পর আমি ও আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আকাশের সহযোগী সুমি স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের একটি কাল্পনিক অভিযোগে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে একটি পাল্টা মামলা দায়ের করায়।
উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের শরণখোলা গ্রামের বাসিন্দা মো. সেলিম খাঁন বলেন, জোয়ারের পরিচালক আকাশ একজন বড় মাপের প্রতারক। সে শরনখোলা ছাড়াও সাতক্ষীরা, মুন্সিগঞ্জ ও মনিরামপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় একইভাবে প্রতারনার ফাঁদ পেতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। তার নামে বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা রয়েছে। আকাশ শরনখোলায় এসে স্থানীয় কয়েকজন লোভী ব্যক্তিকে ভাড়া করে ও তার ব্যবসার অংশিদার করার লোভ দেখিয়ে প্রতারনার জাল বুুনতে শুরু করেন। এছাড়া আকাশ নীহা নামে আধুনিক মানের ইকো পার্ক নির্মাণ করার জন্য আমার মালিকানাধীন পাঁচ বিঘা জমি ২০ বছরের জন্য লীজ নেয়ার কথা বলে একটি ষ্ট্যাম্পে চুক্তি করেন। পরে দুই বছরের ভাড়ার টাকা হিসেবে ট্রাষ্ট ব্যাংক মুন্সীগঞ্জ শাখার অনুকুলে আমার নামে ৬৬ হাজার টাকার একটি ভুয়া চেক প্রদান করেন। পরে দেখি ওই একাউন্টে কোন টাকা নাই। আমি শ্রীগ্রই প্রতারক আকাশের বিরুদ্ধে মামলা করব।
এ ব্যাপারে শরনখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন জানান, আকাশের প্রতারনার বিষয়টি আমি শুনেছি। তাছাড়া তার ব্যাপারে সাতক্ষীরার কিছু ক্ষতিগ্রস্থ লোক আমার কাছে ফোন করে জানতে চেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানার জন্য এনজিও জোয়ারের নির্বাহী পরিচালক আ. রহমান আকাশের (০১৭৪২২৮৯৭৩২) মুঠো ফোনে একাধিক বার কল করা হলে তা বন্ধ থাকার কারনে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।