ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে ডিশ ব্যবসায়ির নিকট চাঁদা দাবির ঘটনায় হামলা, মামলা, বাড়িঘর লুটপাট হয়েছে। দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার হয়ে আদালত থেকে জামিন নেয়। এরপর শুরু হয় আসামী কর্তৃক মুঠোফোনে হুমকি ধেয়ে আসছে মামলার বাদির পরিবারে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, রংপুর নগরীর মুলাটোল পাকার মাথা এলাকার বাসিন্দা নাহিদ চৌধুরী ডিশ ব্যবসা করেন। পাশর্^বর্তী বাবুখাঁ এলাকার বাসিন্দা ছাত্রলীগের রংপুর মহানগর শাখার যুগ্ম সম্পাদক তুষার, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার এবং ছাত্রলীগ নেতা নয়ন ও কালু নাহিদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন।
দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে ডিশের ব্যবসা করতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেয় নেতাকর্মীরা। এরই জের ধরে গত ২৩ এপ্রিল উত্তর বাবুখাঁ এলাকার ডিস লাইনের গ্রাহকের সংযোগের তার কেটে প্রায় ৪ কয়েল ও ২টি মেশিন নিয়ে যায়। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ১৭ হাজার টাকা। তার চুরির বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ব্যবসায়ি নাহিদ।
তার চুরির সাথে জড়িতদের তাৎক্ষনিক পাওয়া যায়নি। তার একদিন পরে গত ২৫ এপ্রিল রাত ৮টারদিকে ব্যবসায়ি নাহিদকে মোবাইল ফোনে বাবু খাঁ এলাকায় ডেকে নেন তুষার। নাহিদ সেখানে গেলে দিদারের নেতৃত্বে কয়েকজন রামদা দিয়ে কুপিয়ে নাহিদকে পাশের ড্রেনে ফেলে যান। পরে স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হামলার ঘটনায় আহত নাহিদের স্ত্রী ফেন্সী বেগম বাদি হয়ে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার ৩৪, তাং-২৯/০৪/২০২০। এছাড়াও নাহিদ চৌধুরি বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন । যার মামলা নং-২৭, ২৬/০৪/২০২০ইং।
এ ঘটনায় গত ১ মে (শুক্রবার) বিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নগরীর দর্শনা এলাকার শুটকির মোড় এলাকা থেকে রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক তুষার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক দিদার। ফেনসিডিল সেবন করতে তারা ওই এলাকায় অবস্থান করছিল নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে। এ মামলায় আসামিদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হলেও অপর দুজনকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগের ২ নেতাসহ অন্যান্যরা আদালতে জামিন নিয়ে বের হন। এরপর শুরু হয় নাহিদ পরিবারসহ অপর স্বাক্ষিদের হুমকি-ধামকি। গত ৬ মে নুর ইসলাম কালু তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দিয়ে নাহিদের বড়ভাই সেলিম চৌধুরিকে হুমকি-ধমকি দেয়। এসময় মামলা প্রত্যাহার না করলে মারধর, খুন জখমসহ জীবনের ক্ষতি করবে বলে দফায় দফায় হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করেন সেলিম চৌধুরি। এ ব্যাপারে ৭ মে সেলিম চৌধুরি কোতয়ালী থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেন যার জিডি নং-২৫১।
এ ছাড়াও গত ২৯ মে একই এলাকার ফার্নিচার ব্যবসায়ি মোত্তালেব হোসেনের বাড়ি ভাংচুড় ও লুটপাট করে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। এসময় লুটপাটকারিা বাড়িতে রক্ষিত ৫০ হাজার টাকা, ২ লক্ষাধিক টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালংকার নিয়ে সটকে পড়ে। অপরদিকে ২৯ মে ফার্নিচার ব্যবসায়ি মোত্তালেব হোসেনের বাড়ি ভাংচুড় ও লুটপাটের টাকা ও গহনা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এসময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নুর ইসলাম কালু আহত হয়। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
বর্তমানে জীবননাশের আশঙ্কায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে ডিশ ব্যবসায়ি নাহিদের পরিবার। অন্যদিকে ফার্নিচার ব্যবসায়ি মোত্তালেব হোসেন তার পরিবার নিয়েও শঙ্কিত। এমতাবস্থায় স্থানীয় এলাকাবাসী মামলার আসামীসহ ইন্দনদাতাদের গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় ভুক্তভোগী পরিবারে যে কোন সময় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে স্থানীয় এলাকাবাসি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।