গাজীপুরে চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ ফারজানা আক্তার বিথী (২৫) হত্যার দেড় বছর পর একজনকে আটক করেছে পুলিশ।পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ জানতে পারে গৃহবধূ বিথীকে তার স্বামী ও ননদসহ কয়েকজন মিলে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজায়।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থানার বনবালা গ্রামের মো. ইসমাইল হোসেনের ছেলে লিটনকে (২৬) গত ৪ জুন ভোরে ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানার চুড়াখাই এলাকা থেকে আটক করে। পরে ওই দিন লিটনকে গাজীপুর আদালতে নেয়া হলে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান জানান, বিথী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে লিটন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
লিটন পুলিশকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার ভোগড়া এলাকার আফিজ উদ্দিনের ছেলে মো. রাশেদ চৌধুরী ওরফে রন্টির (৩০) সঙ্গে একই এলাকার ফারজানা আক্তার বিথীর (২৫) বিয়ে হয়। বিয়ের পূর্বে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পর রন্টির পরিবারের সদস্যরা বিথীকে ভালোভাবে মেনে নেয়নি। যার প্রেক্ষিতে বিথীর সঙ্গে তার স্বামী রন্টির পরিবারের সদস্যদের প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো এবং মাঝে মধ্যে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটতো।
রন্টি তার স্ত্রীকে নিয়ে পরিবারের সকল সদস্যদের সঙ্গে বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস করতেন। পরবর্তীতে রন্টি ও তার স্ত্রী বাড়ির দোতলায় বসবাস শুরু করলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রন্টির স্ত্রী বিথীর ঝগড়া-বিবাদ কমেনি। একপর্যায়ে রন্টিকে তার পরিবারের লোকজন পুনরায় অন্যত্র বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং রন্টিও তাদের পক্ষ নেন। ইতোমধ্যে রন্টি তাদের ভাড়াটিয়া তানি নামের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ সকল বিষয় নিয়ে স্ত্রী বিথীর সঙ্গে রন্টির চরম মনোমানিল্য সৃষ্টি হলে বিথী রাগ করে তার বাবার বাড়ি চলে যান। পরে স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে রন্টির স্ত্রী পুনরায় তার স্বামীর ঘরে ফিরে আসেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান জানান, ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট মামলার প্রধান আসামি নিহতের স্বামী মো. রাশেদ চৌধুরী ওরফে রন্টি, তার বোন তোরা, মামা খালেক, মামাতো ভাই ছানি, কাজের মেয়ে আছমা এবং আছমার স্বামী মুমিন মিলে গৃহবধূ ফারজানা আক্তার বিথীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সময় লিটনকেও অংশগ্রহণ করতে বলেন। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ঘটনার দিন ৯ আগস্ট সকাল পৌনে ৮টার দিকে রন্টি ফোন করে লিটনকে বাসায় ডেকে নেন। রন্টির দোতলার বাসায় এসে লিটন দেখে রন্টি তার বোন তোরা, সানি, কাজের মেয়ে আছমা ও তার স্বামী মুমিন বসে আছেন। একপর্যায়ে তোরা তার গায়ের ওড়না দিয়ে বিথীর গলা প্যাঁচিয়ে ধরেন। রন্টি ও তোরা দুই দিক থেকে ওড়না টেনে ধরে। রন্টি এক হাত দিয়ে ভিকটিমের মুখ চেপে ধরেন। সানি-বিথীর দুই হাত ও লিটন পা চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। কাজের মেয়ে আছমা ৪/৫ মিনিট পর রন্টির মামা খালেককে ডেকে নিয়ে আসেন। বিথীর মেয়ে কান্নাকাটি শুরু করায় লিটন শিশুটিকে নিয়ে তৃতীয় তলায় রন্টির ছোট ভাইয়ের নিকট দিয়ে পুনরায় দোতলায় এসে দেখেন কাজের মেয়ে আছমার স্বামী মুমিন একটি মোড়ার ওপর উঠে ফ্যানে ওড়না বাঁধছে। তারপর রন্টি, সানি, তোরা মিলে বিথীর মরদেহ উচুঁ করে ধরে ফ্যানে ঝুলিয়ে দেন।
পরে পুলিশ খবর পেয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। ময়নাতদন্তে বিথীকে হত্যার আলামত পাওয়া গেলে তার বড় ভাই রুহুল আমিন সরকার রনি বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পিটিশন মামলা দায়ের করেন। গাজীপুর পিবিআই মামলাটি দেড় বছর তদন্ত করে হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।