মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়া)প্রতিনিধি:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থানের জন্যে সরকারের গৃহিত ৪০ দিনের কর্মসূচির টাকা হাতিয়ে নিলেন ইউপি চেয়ারম্যান! শেষতক ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দাখিল হলো লিখিত অভিযোগ। ওই প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন এমন অভিযোগে নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওক্ত কর্মসূচিভূক্ত শ্রমিকরা।
জানা যায়, আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় নাম অন্তর্ভূক্ত থাকা নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের ৯৪ জনের মধ্যে জাফরপুর গ্রামের আক্তার হোসেন, রেজাউল করিম, আলাউদ্দিন, আবুল হোসেন এবং এরশাদ মিয়া নামের পাঁচজন শ্রমিক চেয়ারম্যান আবু মুছার বিরুদ্ধে কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনয়ন করে ২ জুন মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
দাখিলকৃত ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অতি দরিদ্রদের সহায়তায় সরকার টাকা দেবে বলে তাদের প্রত্যেকের নামে ‘ব্যাংক এশিয়া লি.’র ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় হিসেব (অ্যাকাউন্ট) খোলা হয়। গত ৬ এপ্রিল তাদের প্রত্যেকের হিসেবে আট হাজার টাকা করে জমা হয়। যার ম্যাসেজও আসে তাদের মোবাইলে। পরদিন সকালে চেয়ারম্যান ব্যাংক কর্মচারী মারুফ হোসেন সহ তাদের বাড়িতে এসে মেশিনে তাদের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে টাকা পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে যান।
আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পর ওইদিনই টাকা উত্তোলন হয়েছে বলে তাদের মোবাইলে ম্যাসেজ আসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা টাকা পাননি।এমনকি টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো চেয়ারম্যানের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। তারা বলেন, কর্মসূচিতে নাম থাকা অতি দরিদ্রদের কেউই টাকা পাননি।
বিগত চার বছর ধরে এভাবেই চেয়ারম্যান আবু মুছা অতি দরিদ্রদের টাকা আত্মসাত করে চলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়, এর আগে জনতা ব্যাংকের ভোলাচং শাখা থেকে কর্মসূচির হিসেব পরিচালনা করা হতো।
ওই ব্যাংকের ম্যানেজার অবৈধভাবে টাকা উত্তোলনে আপত্তির কারণে চেয়ারম্যান ব্যাংকের শাখা পরিবর্তন করেন। কর্মসূচির তালিকায় চেয়ারম্যান তার কয়েকজন স্বজনের নাম রেখেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এই স্বজনরা হচ্ছেন চেয়ারম্যানের আপন চাচাতো ভাই দুবাই প্রবাসী হাবিবুর রহমান লিটনের স্ত্রী বিউটি আক্তার, ইরাকে কর্মরত মো. দেলোয়ার হোসেন, ওমানে কর্মরত মো. আল-আমীন।
ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের ইব্রাহিমপুর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কর্মকর্তা মারুফ হোসাইন ওই কর্মসূচির টাকা চেয়ারম্যান এবং নিকটবর্তীদের হাতে দেয়া হয় জানিয়ে বলেন, ‘এতোগুলো টাকা বাড়িবাড়ি গিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। আর অফিসে আসলে ঝামেলা হয়। আমাদের কাছে এতো টাকা ক্যাশও থাকেনা। ফিঙ্গার নিয়ে চেয়ারম্যান বা নিকটবর্তী যারা আছেন তাদের কাছেই ওই টাকা পৌঁছে দেয়া হয়।’ ৯৪ জন হতদরিদ্র্যের জন্যে মোট ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা বরাদ্দ পেমেন্ট করেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু মুছা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘লেবারের টাকা লেবারই নিছে। লেবার কাজ করছে। তাদের বাদ দিয়ে টাকা উঠানোর কোনোরকমের সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যেমূলকভাবে আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়েছে।’
নবীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘এই কর্মসূচির একজন শ্রমিক প্রতিদিন ২০০ টাকা করে পান। এ থেকে ২৫ টাকা করে সঞ্চয় জমা রাখা হয়। সেই হিসেবে ৪০ দিনে একজনের মোট পাওনা ৮ হাজার টাকা হলেও সঞ্চয়ের এক হাজার টাকা বাদে তারা ৭ হাজার টাকা পান। প্রত্যেক বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর এবং এপ্রিল-মে মাসে এই কর্মসূচি হয়ে থাকে।’
(ছবিসহ)
প্রেরক: মিঠু সূত্রধর পলাশ,নবীনগর(ব্রাহ্মণবাড়িয়িা)প্রতিনিধি:০১৭২১০২৬১৮৮।