মোঃ শামসুর রহমান তালুকদার –
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটে গ্রীষ্মকালীন ফল কাঁঠালের বাজার এখন রমরমা। প্রতি সপ্তাহে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কাঁঠাল, বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় পৌঁছায়। স্বাদে মিষ্টি ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ফলটি শুধু রসনা তৃপ্তিই নয়, স্বাস্থ্য সচেতনতার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও বেশ বড় ভূমিকা রাখছে। হজমে সহায়তা করা সহ পানিশূন্যতা প্রতিরোধ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে কাঁঠালের ভূমিকা এক কথায় অপরিসীম।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের পাহাড়ি উপজেলা সখীপুরের প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় কাঁঠালগাছ রয়েছে। এসব গাছে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর, বড়চওনা, কচুয়া, মহানন্দপুর, নলুয়া, তক্তারচালা ও দেওদীঘি- এই সাতটি হাটে নিয়মিত এই মৌসুমি ফল বেঁচাকেনা হয়। এর মধ্যে কুতুবপুর হাটটি জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে মূলত কাঁঠালের বড় বাজারে রূপ নেয়- যেখানে সপ্তাহে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকার কাঁঠাল কেনাবেঁচা হয়।
এ হাটটি সপ্তাহের শনিবার, রোবিবার, মঙ্গলবার ও বুধবার বসে। অপরদিকে, নলুয়ার হাট বৃহস্পতিবার, দেওদীঘি সোমবার, তক্তারচালা শনিবার, কচুয়া রোবিবার ও বুধবার এবং মহানন্দপুর হাট বসে মঙ্গলবার। এসব হাটেও প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার কাঁঠাল বেঁচাকেনা হয়। সব মিলিয়ে প্রতি সপ্তায় সখীপুর থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
সবচেয়ে বৃহৎ কুতুবপুর হাটে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটের আগের দিন বিকাল থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল হাটে নিয়ে আসেন। এরপর পাইকাররা কিনে নিয়ে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী কালাম ও বাবলু মিয়া জানান, তারা সখীপুরের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঁঠাল কিনে হাটে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। প্রতিটি কাঁঠালের দাম আকারভেদে ৪০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে প্রতিটা কাঁঠাল ৩০ থেকে ৬০ টাকায় কিনে সংগ্রহ করেন।
কুতুবপুর হাটের ব্যবসায়ী দেলোয়ার বলেন, প্রতি বছর ভরা মৌসুমে এ হাট থেকে ১৫-২০ ট্রাক কাঁঠাল দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। প্রতি হাটে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকার কাঁঠাল কেনাবেঁচা হয়।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আব্দুল জলিলের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি প্রতি সপ্তাহে এক ট্রাক কাঁঠাল ( দুই হাজার পিস) কিনে ঢাকায় নিয়ে যান। সারা সপ্তাহ বিক্রি করে- কিছু লাভ থাকে।
তবে কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের
সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কাঁঠালের দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, গাছ থেকে কাঁঠাল সংগ্রহ, পরিবহন ও বাজারজাত করতে যে খরচ হয়, তার তুলনায় বিক্রিতে লাভ খুবই সামান্য, ফলে অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন মুঠোফোনে জানান, কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এর প্রতিটি অংশই ব্যবহারযোগ্য, এমনকি খোসাও গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সখীপুরে বাণিজ্যিকভাবে কাঁঠাল চাষ করে কৃষকরা ভালো লাভবান হতে পারেন। তারা কৃষকদের সেভাবেই উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।