শরীফুজ্জামান ফাহিম
মামলার ‘ভারে’ নুয়ে পড়ছেন। প্রায় প্রতিদিনই ছুটতে হয়েছে মামলার হাজিরা দিতে আদালতের বারান্দায়। ছিন্ন হয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক। স্বজনরা বেশিরভাগ সময়’বোঝা’ হিসেবে মনে করেছেন তাকে। এমনকি বাবা ছেলে এক সাথেই জেলখানায় বন্ধী জীবনে ছিলেন দীর্ঘ সময়।
পতিত সরকারের পুরোটা সময় জুড়ে ছিল হামলা, মামলা, হুমকি ও জেল জীবনে। তবে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ই আগস্টের সরকার পতনের পর এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে হঠাৎই এতো আলোচনা শুরু হয়েছে।
তিনি হলেন আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার শরীফ চৌধুরী, বাবা কামাল উদ্দিন চৌধুরী। দুজনেই ছিলেন বিএনপির রাজনীতির সাথে। ৫ই আগস্টের পর ফিরে এসেছেন নিজ এলাকায়। তবে দুজনেই পরিবার থেকে অনেকটাই ছিন্ন ছিলেন প্রায় ১৭টি বছর। সহ্য করেছেন জুলুম – নির্যাতন, হামলা – মামলা ও জেল জীবন। ১৭ বছরের বিভিন্ন সময়ে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগ সরকারের করা ৪৬টি মামলার আসামী করা হয় ছাত্রদলের আশুলিয়া থানা শাখার সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি। বাবা কামাল উদ্দিন চৌধুরীর মামলা হয়েছে তারও অধিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকায় জনপ্রিয়তা ছিলো তাদের অভিশাপ। বাবা ও ছেলের রাজনীতির শুরু হয় অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষকে সহযোগীতার মাধ্যমে। অসহায়ত্বের কোন খোঁজ পেলেই ছুটে গেছেন রাত কিংবা তীব্র শীতে। এমনি ঘরের মূল্যবান সামগ্রী বিক্রি করেও খাবার তুলে দিয়েছেন দরিদ্র পরিবারের কাছে। নিজ জমিতে আশ্রয় দিয়েছেন অনেক পরিবারকেই। এমনকি দুঃসময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের পরিবারকেও আর্থিক ভাবে সাহায্য চালিয়ে গেছেন বাবা ও ছেলে। তবে সব কিছুই করতেন লোক চক্ষুর আড়ালে। সম্প্রতি নানা স্মৃতিচারণের মধ্য দিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত আলোচনায় আসে পরিবারটি।
গেল ঈদুল ফিতরে প্রায় তিনশত পরিবারকে ঈদ সামগ্রী পাঠিয়েছেন তিনি। এছাড়া অবহেলায় থাকা প্রায় দেড়শতাধিক দিনমজুরকে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি দায়িত্ব নিয়েছেন ঈদ উৎসবে পাশে থাকার। তবে নিজেদের নাম হাসিল নয়। পুরোটাই দিয়েছেন বিএনপির স্বার্থে।
এ ব্যাপারে কথা হয় বিএনপি নেতা শরীফ চৌধুরীর সাথে। তিনি বলেন, আমার বাবা আশুলিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে হওয়ায় ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পরি। ২০০২ সালে সাভার উপজেলা ছাত্রদলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে শুধু তাই নয় বৃহত্তর ঢাকা জেলা ছাত্রদলের সদস্য এবং পরবর্তীতে আশুলিয়া থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হই। আমার বাবা কে দেখতাম নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র পরিবারের কাছে ছুটে যেতেন। মাঝে মাঝে বাসায় নিয়ে আসতেন। তাদের সাথে এক জায়গায় বসে খাওয়া দাওয়া করতেন। সেখান থেকেই মানুষের সেবাতে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে আসা। ছাত্রদলের আদর্শিক যাত্রা থেকে শুরু করে বর্তমানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে আদর্শিত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। তবে যে সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিন্ন ভিন্ন ছিল সে সময় সবাইকে এক সাথে নিজ খরচে সেইভ জায়গায় রাখতাম। তাদের পরিবারের খরচ চালাতাম আবার কেউ অসুস্থ হলেও তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতাম।
তিনি আরও বলেন, এখনও আমরা আগের ধারাতেই আছি। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি। আর আমাদের কার্যক্রম বিএনপির স্বার্থে , দলের স্বার্থে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বার্থে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই। সত্যি কথা বলতে মানুষকে সেবা দিতে পেরে নিজের কাছেই অন্য রকম ভাল লাগা কাজ করে। আমার বাবা এতদিন করেছেন এখন আমি করছি। আমার যতটুকু সামর্থ্য আছে আমৃত্যু সাধারণ জনতার সেবা দিয়ে যাবো।
বা বু ম/ অয়ন