স্টাফ রিপোর্টার-
রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ রোডে ডাকাতি করা একটি চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তরা বিভাগ।
গ্রেফতাররা হলেন মো.ফয়সাল আহাম্মেদ রিগান (৩০), মো.তারেক মিয়া (৩৫), তানভীর আহম্মেদ অন্তর (২৬), মো. মিলন (২২), মো.জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল (৩২), আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), মো.রতন মিয়া (৩৮), মো.সেলিম মিয়া (৩০), মো.রুবেল মিয়া (৩৪) ও মো.সুমন মিয়া (৩৫)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে লুন্ঠিত ৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা, লুন্ঠিত ১৩ টি মোবাইল ফোন,২ টি চাকু ও প্লাস্টিকের রশি উদ্ধার করা হয়।
শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন নাবিস্কো এলাকায় ও ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানাধীন চরপাড়া মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টুরোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয়ে কনফারেন্স কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, গত ১৬ জুন রাজধানীতে গরু বিক্রি করে পাইকারদের একটি দল বিমানবন্দর এলাকা থেকে একটি বাসে উঠে জামালপুর যাওয়ার জন্য। বাসে উঠার পর বাসের দরজা লক করে দেয় হেলপার। আব্দুল্লাহপুর যাওয়ার আগে পাইকারদের কাছ থেকে বাসের ভাড়া চায় হেলপার। জামালপুরের রাস্তা অনেক দূরে সে জন্য পাইকাররা পরে ভাড়া দিতে চান। এরপরই পাইকারদের শার্টের কলার ধরে ফেলে বাসের হেলপারসহ বাসে আগে থেকে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা। তারা পাইকারদের কিল ঘুষি দিয়ে তাদের মুখ বেঁধে ফেলে এবং তাদেরকে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় ডাকাত দলের পাইকারদের বলে তারা যেন তাদের টাকা পয়সা তাদের দিয়ে দেয়। গরু বিক্রি করার যে টাকা পাইকারদের কাছে ছিল তা পুরাটা নিয়ে তাদেরকে রাস্তায় ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।
তিনি বলেন, পরে ঘটনার দিন বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে এই বিষয়ে কাজ করে ডিবির উত্তরা বিভাগ। তদন্তের এক পর্যায়ে ডিবি উত্তরা বিভাগ এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১০ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার ১০ ডাকাতের বিরুদ্ধে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ডাকাত দলের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা মানুষজনকে ডাকাতি করে। এছাড়া তারা বিমানবন্দর এলাকায় অবস্থান করে প্রবাসীরা আসলে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায়।
গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা প্রায়সই ঢাকা ও গাজীপুর রোডে ডাকাতি করে থাকে। এই ডাকাত দলের নেতৃত্বে রয়েছে গ্রেফতার বাদল, তারেক ও লিটন নামে আরেক পলাতক ডাকাত।
ঈদ-উল-আজাহাকে কেন্দ্র করে অস্থায়ী গরুর হাট গুলোতে তাদের লোকজন থাকে। তারা গরুর পাইকারদের অনুসরণ করে তাদের গাড়িতে তুলে ডাকাতি করে। এছাড়া ঈদ কে কেন্দ্র করে ঘরমুখো মানুষ সঙ্গে করে টাকা পয়সা নিয়ে যায়, তারা সেগুলো ডাকাতি করে লুট করে। এই চক্রটি এখন পর্যন্ত ২০০ থেকে ২৫০ টি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এবারের ঈদ-উল-আজাহাকে কেন্দ্র করে তারা এখন পর্যন্ত ছয় থেকে সাতটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। ঈদের আগে খিলক্ষেত এলাকায় চার জনকে গাড়িতে তুলে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল লুট করে নিয়ে যায়। ঈদের ১০ দিন আগে বিমানবন্দর থেকে একজন প্রবাসীকে গাড়িতে তুলে তার রিয়াল-টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা আর জানায়, লুট করার টাকার মধ্য থেকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের অন্যতম নেতা মো.জাবেদ ইকবাল ওরফে বাদল এবার ঈদে গরু কোরবানি দিয়েছে। লুটের টাকার মধ্যে থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ডাকাত দলের আরেক নেতা মো.তারেক মিয়া একটি গরু কোরবানি দিয়েছে। একদিকে গরুর পাইকারদের কাছ থেকে টাকা লুট করে তারা সেই টাকা দিয়ে আবার ঈদে কোরবানি দিয়েছে।
তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার আশেপাশে অনেক মামলা রয়েছে সেগুলো আপনার তদন্ত করব। এছাড়া তারা ডাকাতির টাকা কিভাবে ভাগবাটোয়ার করতো সেগুলো আমরা তাদের রিমান্ডে এনে জানার চেষ্টা করব ।
ডাকাত দলের সদস্যরা জানিয়েছে তারা ২০০ থেকে ২৫০ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। তাহলে তারা গ্রেফতার হয়েছে কয়বার এবং জামিন পেয়েছে কয়েকবার এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, মামলাগুলি বিভিন্ন থানাতে হয়েছে। আদালত থেকে তারা কিভাবে জামিন পেয়ে বের হয় সে তথ্য আমরা দিতে পারবো না।