স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর কমলাপুর এবং মৌচাক এলাকা থেকে রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারি’র অভিযোগে ১০ জনকে আটক করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৩ । এসময় আটককৃতদের কাছ থেকে বিপুলসংখ্যক রেলওয়ের টিকিট এবং আলামত জব্দ করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেনঃ মোঃ সোহেল রানা (২৭), মোঃ মাহবুবুর রহমান (২৮), মোঃ বকুল হোসেন (২৫), মোঃ শিপন আহমেদ (২৯), মোঃআরিফ (৩৮) শাহাদাত হোসেন (৩৫), মোঃ মনির (২৫), শিপন চন্দ্র দাস (৩৫), মনির আহমেদ (৩০) এবং মো: রাজা মোল্লা (২৬)।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক তাৎক্ষণিক ব্রিফিং এ এসব তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো ফিরোজ কবীর।
এসময় তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী ও টিকেট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্মে স্বস্তিকর রেলভ্রমনের টিকেট প্রাপ্তি অনেক সাধারণ জনগণের জন্য জন্য অস্বস্তি, চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে বা রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে টিকেট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকেট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের নিকট দুই-তিন গুন বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছে। সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট কালোবাজারী কর্তৃক অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়।
তিনি আরও বলেন, টিকেট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতাসহ ১০ জন সক্রিয় সদস্যকে বিপুল সংখ্যক ট্রেনের টিকেটসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ট্রেনের টিকেট কালোবাজির চক্রের সদস্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ ওকালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব।
লে. কর্নেল ফিরোজ কবীর জানান, গতকাল রাতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর কমলাপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে৷ তাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ট্রেনের বিপুল পরিমাণ টিকেট, ১০ টি মোবাইল ফোন, ১০ টি সীমকার্ডসহ কালোবাজির বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। চক্রটি সংঘবদ্ধভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় সকল ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট বুকিং এর জন্য চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে যুক্ত হয়ে টিকিটি কালোবাজারী করে আসছে মর্মে স্বীকার করেছে।
অধিনায়ক বলেন, ঈদ, পূজা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ বিশেষ ছুটির দিনকে উপলক্ষ করে গ্রেফতারকৃত আসামিরা বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহ করতো। তারা প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে দেশব্যাপী বিভিন্ন স্টেশনের অসাধু কর্মচারী ও টিকেট কাউন্টারম্যানদের মাধ্যমে আনুমানিক প্রায় ২-৩ হাজার রেলওয়ের টিকেট কালোবাজির মাধ্যমে বিক্রি করতো। তারা আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহার পূর্বের চাইতেও অধিক সংখ্যক টিকেট সংগ্রহের জন্য পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।
অধিনায়ক আরও জানান, টিকেট বিক্রয়ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে সিন্ডিকেটের মূলহোতাসহ বাকি বিক্রয়কারী সহযোগীদের মাঝে ভাগাভাগি হতো। এই অর্থ কখনো তারা নগদ হাতে-হাতে বুঝিয়ে দিতো আবার কখনো মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে লেনদেন করতো। সিন্ডিকেটের প্রত্যেক সদস্য অবৈধভাবে ট্রেনের টিকেট বিক্রি করে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা উপার্জন করতো। এভাবেই পরষ্পরের যোগসাজশে চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ দেশব্যাপী ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে আসছিল।
তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।