স্টাফ রিপোর্টার- আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা’কে টার্গেট করে সক্রিয় রয়েছে জালটাকা তৈরি চক্রের সদস্যরা। প্রতিবার ঈদ আসলেই এসকল অসাধু চক্র গরুর হাট, বিপনী বিতান, পাইকারী পন্যর আড়ৎসহ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে বিপুল পরিমানে জালনোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে৷ তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও ধারাবাহিক অভিযানের ফলে এসকল চক্রের কার্যক্রম কোনঠাসা হয়ে পড়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৭জুন) গভীর রাতে র্যাব -৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে বিপুল পরিমান জালনোটসহ প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতাকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতের নাম- হৃদয় মাতব্বর (২২)। এসময় তার নিকট থেকে জাল নোট তৈরীর সরঞ্জামাদ জব্দ করেছে র্যাব।
আজ শুক্রবার (৮ জুন) সকালে র্যাব ৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার মো: শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
লিখিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের অবাধ কারবার নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলে র্যাব এসব সংঘবদ্ধ জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।
তিনি আরও বলেন গতরাতে র্যাব-৩ এর একটি চৌকষ আভিযানিক দল শ্যামপুর থানাধীন পশ্চিম ধোলাইপাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জালনেট তৈরির মূলহোতা’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত আসামির হেফাজত থেকে জালনোট তৈরীতে ব্যবহৃত ১ টি সিপিইউ, ১ টি মনিটর, ১ টি প্রিন্টার, ১ টি কী-বোর্ড, ১ টি মাউস, ১ টি রাউটার, ২ টি মাল্টিপ্লাগ, ১ টি পেপার কাটার, ৯ টি ভুয়া এনআইডি কার্ড, ৩ টি ভুয়া ভারতীয় এনআইডি কার্ডের ফটোকপি এবং ৬০,৭০০/- টাকা মূল্যমানের জালটাকা (৬০২ টি ১০০ টাকার নোট এবং ০১ টি ৫০০ টাকার নোট) উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, আসামী হৃদয় কম্পিউটারে বেশ পারদর্শী। সে ধোলাইপাড় এলাকার একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতো। ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং নিজের অর্জিত কম্পিউটার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জাল নোট তৈরিতে পারদর্শিতা অর্জন করে। পরবর্তীতে হৃদয় কম্পিউটার, প্রিন্টার, পেপার কাটার এবং জালটাকা তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজ গৃহে জালটাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে। সে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা বিক্রয়ের জন্য নেটওয়ার্ক তৈরী করে এবং এসকল পেইজ প্রমোট ও বুস্টিং করে অনেক পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সংগ্রহ করে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ জাল নোট প্রস্তুত ও বিক্রয় করে আসলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল।
জালটাকা বিক্রি কার্যক্রমের প্রকৃয়া জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত হৃদয় প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে সে প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছিল।
এসকল জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাবের কঠোর গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রয়েছে গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানা যায়।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি –
জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত হৃদয় অবৈধভাবে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে দেশী ও বিদেশী ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে সেগুলো বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সদস্যদের কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করত।