স্টাফ রিপোর্টার- নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংঘটন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারীকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।
গ্রেফতারকৃতের নাম আব্দুর রহিম। গত (১৫ মে) বুধবার তাকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির একটি টিম।
আজ শুক্রবার (১৭ মে) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান ।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার মাস্টারমাইন্ড ও সংগঠনের প্রধান শামিন মাহফুজকে গত বছরের জুন মাসে গ্রেফতারের পর শারক্বিয়ার প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও গুলির উৎস, অর্থায়ন সম্পর্কে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর আগে একই বছরে ৮ জানুয়ারি শামিন মাহফুজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোঃ ইয়াছিন এবং অস্ত্র সরবরাহকারী মোঃ কবির আহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাহাড়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি চিনের পাশাপাশি স্থানীয় কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিম শারক্বিয়ার সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের তথ্য আসে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, শামিন মাহফুজ কক্সবাজার ও বান্দরবান এলাকায় নওমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার আড়ালে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া গড়ে তোলে। নওমুসলিমদের নিয়ে কাজ করার সময় স্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী মোঃ কবির আহাম্মদ ও আব্দুর রহিমকে সে সংগঠনের দাওয়াত দেয়। তারা সংগঠনের হয়ে কাজ করতে রাজি হয় এবং অস্ত্র ও গুলি সরবরাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। শামিন মাহফুজ ও অস্ত্র সরবরাহকারী কবির গ্রেফতার হলে এবং পাহাড়ে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হলে আব্দুর রহিম ও তার সহযোগিরা আত্মগোপনে চলে যায়।
তিনি আরো বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বুধবার (১৫ মে) সিটিটিসির একটি টিম গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অভিযান পরিচালনা করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র সরবরাহকারী রহিমকে গ্রেফতার করে। এরপরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন বনে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা দুইটি ড্রামের ভেতর থেকে একটি ৭.৬৫ বিদেশি পিস্তল, চারটি দেশী তৈরি বন্দুক, তিনটি দেশি বারুদ ভর্তি অস্ত্র, একটি দেশি তৈরি ওয়ান শুটারগান, দেশি তৈরি একটি ধারালো অস্ত্র, ১৬ রাউন্ড গুলি, ১১টি কার্তুজ, ২৪টি শর্টগানের খোসা, দুইটি বাইনোকুলার, একটি গ্যাস মাস্ক, একটি মোবাইল সিগন্যাল বুস্টার, দুইটি ওয়াকিটকি, এসিড সদৃশ ছয় লিটার তরল পদার্থ, একটি চার্জার লাইট, একটি রিচার্জেবল ব্যাটারি, ৬০ ফুট ইলেকট্রিক তার, একটি তারসহ এন্টেনা, একটি হাতুড়ি, একটি করাত, ফ্রেমসহ একটি হেক্সো ব্লেড, চারটি ইলেকট্রিক বাল্ব ও হোল্ডার এবং একটি ত্রিপল উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ততথ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহিম ২০১৯ সালের দিকে “রহিম ডাকাত” গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো । আর এ অস্ত্রগুলো জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়াকে সরবরাহের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ির গহীন বনে মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিলো।
গ্রেফতারকৃত রহিমের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র, ডাকাতি, অপহরণ, বনভূমি ধ্বংসসহ বিভিন্ন অভিযোগে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজার জেলার রামু থানায় মোট ১২টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে বলে যোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।