ডেস্ক রিপোর্ট – নড়াইলের লোহাগড়ায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিকদার মোস্তফা কামালকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামিসহ অন্যতম ৪ আসামিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ ও নড়াইল থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, সাজেদুল মল্লিক (২৫), পাভেল শেখ (২৮), মামুন মোল্যা (২৬) ও মো. রহমত উল্লাহ শেখ (১৯)।
শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ১০ মে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা করে ও এলোপাতাড়ি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা মোস্তফাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান। এ ঘটনায় তার বড় ভাই বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, একজন সাবেক ইউপি সদস্য হত্যাকাণ্ডে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে র্যাব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-৬, র্যাব-৭ এবং র্যাব-১০ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রামের বায়েজীদ ও নড়াইল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যতম আসামিসহ চারজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত ইসলাম বলেন, দীর্ঘ বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। নিহত ব্যক্তি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার আকবর হোসেন লিপনের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে শত্রুতা ছিল।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বিরোধের জের ধরে নিহত মোস্তফা কামাল এবং আকবর হোসেন লিপনের অনুসারীদের মধ্যে একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে লিপন গুরুতর আহত হয় এবং তার একটি হাত কাটা পড়ে।
পরবর্তীতে লিপন ও তার অনুসারীরা মোস্তফা কামালের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকে। লিপনের নির্দেশনায় ঘটনার দিন সকালে তার ছোট ভাইয়ের বাড়িতে গ্রেফতার সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা মোস্তফা কামালকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মোস্তফা কামালের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ঘটনার দিন সন্ধায় গ্রেফতার সাজেদুলসহ অন্যান্য আসামিরা সুইচ গিয়ার চাকু, রাম দাসহ বিদেশি অস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে ওত পেতে থাকে। নিহত মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্রই সুযোগ বুঝে গ্রেফতার সাজেদুলের হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে মোস্তফা কামালকে লক্ষ্য করে ৩ রাউন্ড গুলি করে; যার মধ্যে ২ রাউন্ড গুলি নিহতের বুকে ও পিঠে লাগে এবং গুরুতর আহত হয়।
র্যাবের মুখপাত্র আরও বলেন, পরবর্তীতে গ্রেফতার সাজেদুলসহ অন্যান্য সহযোগী আসামিরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ঢাকা, পতেঙ্গা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে এবং চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকা থেকে সাজেদুল, পাভেল ও মামুন গ্রেফতার হয়। পরবর্তীতে গ্রেফতার সাজেদুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রেফতার রহমত উল্লাহকে নড়াইল থেকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারসহ ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কমান্ডার আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, গ্রেফতার সাজেদুলের বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি, চুরি ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার পাভেলের বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার মামুন মোল্যার বিরুদ্ধে নড়াইলের লোহাগড়া থানায় মারামারি ও চুরি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে
একটি মামলা রয়েছে এবং এ মামলায় কারাভোগ করেছেন।