1. boyd94289@gmail.com : Ayon Islam : Ayon Islam
  2. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  3. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  4. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
  5. bangladeshbulleting646@gmail.com : Sohel Desk : Sohel Desk
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে অপহরন! কষ্টিপাথর পাচারকারী সিন্ডিকেটের ৭ জন গ্রেফতার

  • সময় : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
  • ২০৬

স্টাফ রিপোর্টার-

লাইসেন্সকৃত বৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকা থেকে গত ১মে রাত ৮ টার দিকে আনোয়ার হোসেন খান (৪৪) নামক একজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ৭/৮ জনের একটি চক্র। পরবর্তীতে তাকে বেঁধে রেখে তার উপরপাশবিক নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের নিকট ৯৫ লক্ষ্য টাকা মুক্তিপন চাওয়া হয়। 

পরিবারের সদস্যরা উপায়ন্তর না পেয়ে অপহরণ-কারীদের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে ১৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রেরণ করে কিন্তু অপহরণকারীরা বাকী টাকা আদায়ের জন্য তাকে আরও নির্যাতন করে এবং পরিবারকে চাপ দিতে থাকে। বাকি টাকা না দিলে তাকে হত্যা করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়।

পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা র‌্যাব-৩ কে বিষয়টি অবহিত করলে তাকে উদ্ধারে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা খোকন হাজী (৬৫)সহ মোট সাত জনকে গ্রেফতারসহ অপহরণকৃত আনোয়ার হোসেনকে  উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-৩)।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চক্রের মূলহোতা হাজী ওয়াজী উল্লাহ্ খোকন (৬৫), মো. আরিফ হোসেন (৫৫), সাইফ উদ্দিন আহমেদ মিলন (৬২), সিরাতুল মোস্তাকিম (৫৮), মো. রুহুল আমিন (৬০), মো. জাকির হোসেন (৩০), ও মো. স্বাধীন (৫২)। এসময় উদ্ধার করা হয় ১টি লাইসেন্সকৃত রিভলবার, ৮ রাউন্ড রিভলবারের গুলি ও ১টি লাইসেন্সকৃত শটগান।

শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর এসব তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিভিন্ন ধাতব মুদ্রার ব্যবসায় সহযোগিতা করায় আসামী খোকন হাজীর সাথে অপহৃত ভুক্তভোগীর ভায়রা ভাই  মোস্তফা হাওলাদারের সাথে ভালো সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে মিলন চক্রবর্তী নামক একজন ভারতীয় নাগরিক আসামী খোকন হাজীকে বিশেষ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও পিতলের ধাতব মুদ্রা ক্রয়ের প্রস্তাব দেন। যার বিনিময় মূল্য ধরা হয় ৪০০ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, মোস্তফা হাওলাদার খোকন হাজীর বিশ্বস্ত লোক হওয়ায় তাকে দুষ্প্রাপ্য কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রা প্রদানের কথা বলে ঝালকাঠি থেকে নকল মূর্তি ও একটি প্লাস্টিকের বাক্সে নকল ধাতব মুদ্রা প্রদান করে। এসময় কৌশলে খোকন হাজীর কাছ থেকে ৯৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মোস্তফা হাওলাদার। নকল মূর্তি ও নকল মুদ্রা পেয়ে খোকন হাজী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে যান। তিনি মোস্তফা হাওলাদারকে ঝালকাঠির বিভিন্ন রাস্তায় রাস্তায় খুঁজতে থাকেন। কিন্তু নিরুদ্দেশ মোস্তফা হাওলাদারের কোন সন্ধান না পেয়ে পাগলপ্রায় হয়ে উঠেন।

অধিনায়ক ফিরোজ কবীর জানান, মূলত ভিকটিম আনোয়ার হোসেন খান’কে উদ্ধার করতে নেমেই র‌্যাবের কাছে এই মহামূল্যবান কষ্টিপাথর ও মূদ্রা পাচার চক্রের সন্ধান আসে। গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী একজন ঠিকাদার। মতিঝিল এলাকায় তার ঠিকাদারীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মোস্তফা হাওলাদারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে তিনি মড়িয়া হয়ে উঠেন। ভিকটিম আনোয়ার হোসেন হলেন মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রা-ভাই। ওই ৯৫ লাখ টাকা আদায় করতেই তাকে অপহরণ করা হয়।

লে. কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর আরও জানান, গত ১ মে রাত ৮ টার দিকে ফতুল্লার একটি চায়ের দোকানের সামনে থেকে খোকন হাজীর নেতৃত্বে ৮-৯ জনের একটি অপহরণকারী চক্র ভিকটিম আনোয়ারকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জিম্মি করে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া এলাকায় খোকন হাজীর মালিকানাধীন ‘‘চুনকুটিয়া রিয়েল এস্টেট লিমিটেড’’ অফিসের ভিতরে আটকে রাখে। অপহরণকারীরা ভিকটিমের উপর লোহার রড, পাইপ ও লাঠি দিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়। আমরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের অফিসের ভেতরে অভিযান চালিয়ে তাদের হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।

আসামিদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, আসামি খোকন হাজী ২০১৫ সাল থেকে দেশের মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রা ভারতে পাচার করে আসছিল। তার এ দুষ্কর্মে সহযোগী ছিল ভারতীয় নাগরিক জনৈক মিলন চক্রবর্তী। যিনি নিজেকে একটি বিখ্যাত ভারতীয় কোম্পানীর এজেন্ট হিসেবে পরিচয় দিতো। কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য পিতলের ধাতব মুদ্রার মূল ক্রেতা ছিল মিলন চক্রবর্তী। গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতব মুদ্রার ৭টি চালান ভারতে পাচার করেছিল। খোকন হাজীর কষ্টিপাথরের মূর্তি ও ধাতবমুদ্রা সংগ্রহের কাজে জনৈক নাঈম (৩৫), মোস্তফা হাওলাদার(৫০) ও রবি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দেশব্যাপী কাজ করতো। বিনিময়ে এদরেকে মাসিক ৩০ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হত।

তিনি আরও জানান, গত ১ মে  মোস্তফা হাওলাদার ও নাঈমের একজন সহযোগী মোবাইল ফোনে খোকন হাজীকে জানান, মোস্তফা হাওলাদারের ভায়রা-ভাই আনোয়ার ফতুল্লা থানাধীন তুষারধারা এলাকায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে এবং তাকে ধরতে পারলে মোস্তফা হাওলাদারের সন্ধান পাওয়া যাবে। এরই প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত খোকন হাজী তার সহযোগী আরিফ হোসেন, মিলন, মোস্তাকিম, রুহুল, জাকির এবং স্বাধীনকে নিয়ে ভিকটিম আনোয়ারকে অপহরণের পরি।কল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতার খোকন হাজীর নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা একটি সাদা মাইক্রো বাসে করে খোকন হাজীর লাইসেন্সকৃগ অস্ত্র দেখিয়ে  জিম্মি করে ভিকটিমকে তুলে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, খোকন হাজী ১৯৭৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। ঠিকাদারী ব্যবসার আড়ালে খোকন হাজী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কষ্টিপাথরের মূর্তি ও দুষ্প্রাপ্য ধাতব মুদ্রার কারবার করে আসছিল। এই অপহরণের ঘটনার সাথে জড়িত তার অপরাপর সহযোগীরা সকলেই তার অবৈধ কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রার কারবারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪