স্টাফ রিপোর্টার-
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী সালাউদ্দিন (২২) ‘কে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ দুইগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল গতকাল (৩০ মার্চ) দুপুরে তাকে গ্রেফতার করে।
রবিবার (৩১ মার্চ) সকালে রাজধানীর টিকাটুলির র্যাব-৩ সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব -৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনিন জানান, মামলার বাদী ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট খানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন এবং মামলার অপর দুই আসামী শাকিল ও হারুন একই এলাকায় বসবাস করতো। তার একত্রে দিন মজুরের কাজ করতো এবং অধিকাংশ সময় একসাথেই কাটাতো।
তিনি আরও জানান, ভিকটিম বিউটি ও তার মা আমেনা বেগম ছাড়া তাদের বাড়িতে অন্য কেউ থাকত না। তার ছোট ভাই সবুর বেল কোম্পানীতে চাকরি করায় বাড়িটি ছিল পুরুষগুন্য। তাদের এই নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসামিদের মধ্যে যৌনলিপ্সা পূরণের আকাঙ্খা তৈরী হয়। এ কারনে তারা ভিকটিমদের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করে।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সুযোগবুঝে আসামী শাকিল বিগত ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাত ৮ টার সময় ভিকটিমদের বাড়িতে এসে তাদের দরজায় ধাক্কা দিয়ে চাচী চাচী বলে ডাকতে থাকে। শাকিলের ডাকগুনে মা মেয়ে ঘরের দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসে। বাহিরে এসে তারা শাকিলের সাথে আরও দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি সালাউদ্দিন ও হারুনকে দেখতে পায়। শাকিল জরুরী কথা আছে বলে ঘরের ভিতরে বসতে চায়। ভিকটিমরা তখন শাকিলসহ তার সহযোগীদেরকে সরল বিশ্বাসে তাদের ঘরের মধ্যে বসতে দেয়।
তিনি আরও বলেন, পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুক্ষন পর শাকিল হঠাৎ তাদের ঘরে সৌর বিদ্যুৎতের আলো নিভিয়ে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন, শাকিল ও হারুন তিনজন মিলে ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। বস্তাধস্তির কারনে ভিকটিমরা চিৎকার করতে শুরু করলে শাকিল তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাদেরকে কেটে ফেলার ভয় দেখায় এবং বাহিরে তাদের আরও অনেক লোক আছে বলে হুমকি দেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা কাপড় দিয়ে ভিকটিম মা ও মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং জোরপূর্বক পালাক্রমে মা ও মেয়েকে একই সাথে দলবদ্ধভাবে গণর্ধষণ করে। আসামিরা ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে জানালে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের নিকট বিষয়টি জানালে, ইউপি সদস্যের সহায়তায় ভিকটিম বিউটি বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় শাকিল, সালাউদ্দিন ও হারুনের নাম উল্লেখ পূর্বক ২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ও শাকিল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কিশোর হারুন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়।
অধিনায়ক জানান, মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালে নারী শিশু ও নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক সালাউদ্দিন ও পলাতক আসামীদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের রায় ঘোষনা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ঘটনার পর থেকেই সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে নাম পরিচয় আত্মগোপন করে অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে। রাজধানীতে ৪-৫ মাস থাকার পর সে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভূইগড় এলাকায় চলে যায়। সেখানেও গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন অটো চালাতো। অটো চালানোর পাশাপাশি সে অটোর ব্যবসাও শুরু করেছিল।
তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।