স্টাফ রিপোর্টার- অসহায় এক কিশোরীকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে দুবাইতে পাচারের পর পাশবিক নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় প্রধান দুই অভিযুক্তকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আটক করেছে র্যাব।
আটককৃতরা হলেন- ফারজানা (৩৫) এবং সোহাগী ওরফে রিয়া (৩০)।
রবিবার (২৪ মার্চ) সকালে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বিগত ২০২৩ সালের ১৬ই আগস্ট রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা জান্নাত আক্তার (১৭)’কে দুবাই প্রবাসী ফারজানা ও তার বোন সোহাগী মিলে দুবাইতে যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করে দেয়। পরবর্তীতে সেখানে অবস্থান করাকালীন গত ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাত এর মৃত্যু হয়।
পরবর্তীতে দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ এম্বাসী থেকে অন্য একজন দুবাই প্রবাসী বাঙালী ওই কিশোরীর লাশ পরিবারের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য গত ২৪ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেন। এই পোষ্টের মাধ্যমে জান্নাত এর পরিবার তার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে।
তিনি আরও জানান, ঘটনার পর জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর বাদী হয়ে গত ২৮ নভেম্বর মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন ট্রাইব্যুনালে মানবপাচার ও হত্যার অভিযোগে একটি নালিশি মামলা করেন। ওই মামলায় ফারজানা ও সোহাগীসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২ থেকে ৩ জনকে আসামি করা হয়।
অধিনায়ক বলেন, গতকাল রাতে র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই দুইজন ঘটনার সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অধিনায়ক আরও বলেন, ওই কিশোরী ও তার পরিবারের সাথে আসামিরা দক্ষিণ যাত্রাবাড়ি এলাকায় পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করে আসছিল। জান্নাত এর পিতা জাহাঙ্গীর সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালিয়ে এবং তার মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। এভাবে টানাপোড়েন এর সংসারে অর্থকষ্টে জর্জরিত থাকা অবস্থায় ভিকটিম জান্নাত’কে তাদের প্রতিবেশী সোহাগী ও তার দুবাই প্রবাসী বোন ফারজানা দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলোভন দেখাতে শুরু করে। দুবাই প্রবাসী ফারজানা ভিকটিমকে জানায় যে, তাকে দুবাই নিয়ে একটি হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ পাইয়ে দিবে। যার মাধ্যমে অনেক ভালো বেতন এবং ভাতাসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা পাবে যাতে করে জান্নাত এর পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আসবে। দুবাই নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ার খরচের কথা বলে ফারজানা ও সোহাগী জান্নাত এর পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা যোগাড় করে দিতে বলে। বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম জান্নাত তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে এবং লোনের মাধ্যমে ৩ লক্ষ টাকা যোগাড় করে সোহাগীর হাতে তুলে দেয়।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, ফারজানার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী সোহাগী তাদের চক্রের দালালের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের একটি ভুয়া ঠিকানা সম্বলিত পাসপোর্ট ও টুরিস্ট ভিসা প্রস্তুত করে। এরপর গত ১৬ আগস্ট তারা জান্নাত’কে দুবাই প্রেরণ করে। দুবাই পৌঁছানোর ২ দিন পর জান্নাত তার পিতা জাহাঙ্গীরকে মোবাইলফোনের মাধ্যমে জানায় যে, আসামিরা দুবাইতে উচ্চ বেতনের চাকুরির মিথ্যা প্রলোভন ও আশ্বাস দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে পাচারপূর্বক বিক্রি করে দিয়েছে এবং সেখানে তাকে অমানুষিক নির্যাতনের মাধ্যমে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
র্যাব জানায়, নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর জান্নাত মৃত্যুবরণ করে। এরপর ভিকটিম এর সাথে তার পরিবার আর কোন যোগাযোগ করতে না পারায় তারা গ্রেফতারকৃত সোহাগীর দ্বারস্থ হয়। সোহাগী ও ফারজানা মিলে ভিকটিমের পরিবারকে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দিতে থাকে এবং তাদেরকে জানায় যে, তাদের মেয়ে দুবাইতে খুব ভালো আছে, সময় পেলেই তাদের সাথে যোগাযোগ করবে।
পরবর্তীতে জান্নাতের মৃত্যুর খবর চাউর হলে ফারজানা গত জানুয়ারি মাসে দেশে ফিরে এসে দেশে ফিরেই তার বোন সোহাগীকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।