স্টাফ রিপোর্টার- হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তির পরও সুদীর্ঘ ৩১ বছর যাবৎ দেশে-বিদেশে পলাতক থেকেও শেষ রক্ষা হলো না আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার (৫৫) নামক এক চরমপন্থীর।
শনিবার (২৩ মার্চ) তাকে ঢাকা মহানগরীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মানিকদী এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৯৩ সালে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের মধ্যে অস্ত্রের দ্বন্দ্বে খুন হন যশোর জেলার অভয়নগর থানাধীন কোটা গ্রামের মতিয়ার রহমান তরফদার (৩০)। ওই খুনের মামলাতেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতারকৃত আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার।
মামলার সূত্র ধরে র্যাব -৩ এর স্টাফ অফিসার মিডিয়া সহকারী পরিচালক মো: শামীম হোসেন জানান, নিহত মতিয়ার রহমান তরফদার ও গ্রেফতারকৃত আসামী আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার একই গ্রামের দুই পাড়ার বাসিন্দা ছিল। ডলার তৎকালীন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (সর্বহারা পার্টির) সক্রিয় সদস্য ছিল। অপরদিকে নিহত ভিকটিম অভয়নগর এলাকার রাজঘাটে অবস্থিত কার্পেটিং জুট মিলস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতো। ওই সময়ে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানা এলাকার জনৈক তোযাম চেয়ারম্যানকে সর্বহারা পার্টির ডলার ও তার দোসররা হত্যা করে একটি বন্দুক ছিনিয়ে নেয়। এই ছিনিয়ে নেওয়া বন্দুকটি আসামি আক্তারুজ্জামান ওরফে ডলার বস্তায় ভরে একজন ভ্যান চালক আসলামের ভ্যানে তেজপাতা পাঠানোর কথা বলে যশোরের নোয়াপাড়ায় নিয়ে যেতে বলে।
তিনি আরও জানান, ভ্যান চলার সময় মাঝে মাঝে রাস্তার ইটের ধাক্কায় খটখট আওয়াজ হওয়ায় ভ্যানচালক আসলাম পথিমধ্যে পায়রা বাজারে ভিকটিম মতিয়ার রহমানকে ঘটনাটি বলে। তখন সে বস্তা খুলে একটি বন্দুক পায় যার গায়ে মৃত তোযাম চেয়ারম্যানের নাম সম্বলিত ছিল। তখন তৎকালীন চেয়ারম্যান আমিনের মধ্যস্থতায় বন্দুকটি পায়রা বাজারে অবস্থিত পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়।
জানা যায়, তোযাম চেয়ারম্যান হত্যার ঘটনায় ডলারসহ চরমপন্থী অন্য সদস্যরা জড়িত, এমন একটি খবর এলাকায় চাউর হয় । এতে ডলার সহ তার চরমপন্থী দলের অন্য সদস্যরা মতিয়ার’কে শায়েস্তা করার পায়তারা করতে থাকে। ১৯৯৩ সালের দশম রমজানের দিন (৩ মার্চ) ডলার সহ ২০-২৫ জনের একটি সশস্ত্র চরমপন্থী পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির দল ভিকটিমের ছোট ভাইকে রাইস মিলে বেঁধে রেখে ভিকটিমের পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। ভিকটিমকে ঘরের বেড়া কেটে টেনে হেঁচড়ে বাইরে নিয়ে এসে বাড়ির সামনেই রাত ১০ টা নাগাদ মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি ২২ টি কোপ মেরে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ভিকটিমের বাবার একটি বন্দুক ও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
র্যাব বলছে মূলত চরমপন্থী দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় ওই ভিকটিম নিহত হয়। পরবর্তীতে আসামির বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালে যশোর জেলার অভয়নগর থানায় হত্যা মামলাটি রুজু হয়। মামলা রুজু হওয়ার পরপরই গ্রেফতারকৃত আসামি নিজ এলাকা থেকে পালিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফেরারি জীবনযাপন করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নিজের নাম ঠিকানা ও পরিচয় গোপন রেখে মাহমুদুল হাসান নামে নতুন নাম ধারণ করে ও নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দীর্ঘদিন যাবত দক্ষিণ আফ্রিকায় আত্মগোপনে ছিলেন। মামলা রুজু হওয়ার পর থেকেই অদ্যাবধি সে পলাতক ছিল। যেহেতু আসামি দীর্ঘদিন যাবত ছদ্মবেশ ধারণ করে পালিয়ে ছিল, আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচার কার্য পরিচালনা শেষে আদালত উক্ত মামলায় দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বিগত ২০০০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ধৃত ডলারের বিরুদ্ধে উক্ত হত্যা মামলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রমাণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় প্রদান করেন। গতকাল (২২ মার্চ) ঢাকা মহানগরীর মানিকদী এলাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব-৩ এর হাতে আটক হয়। তারআসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।