স্টাফ রিপোর্টার-
মাদক বেচাকেনার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় কিশোর গ্যাং এর দুই গ্রুপের মধ্যে। এরই জের ধরে রাজধানীর পল্লবী এলাকার প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফয়সাল’কে।
শনিবার (২৩ মার্চ) সকালে কিশোর গ্যাং লিডার গালকাটা রাব্বি ও টান আকাশসহ ৫ জনকে নরসিংদী ও গাজীপুর থেকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন – মোঃ আকাশ ওরফে টান আকাশ (২২), ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি (২০), মোঃ ইমরান (২৫), মোঃ রাসেল কাজী (২৪) এবং নয়ন (২৫)। এসময় গ্রেফতারকৃত রাব্বি ও আকাশের দেখানো ও বের করে দেয়া মতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও অপর একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃত ৫ জন সহ নিহত ফয়সাল রাজধানীর মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং ‘পেপার সানী গ্রুপের’ সদস্য। গালকাটা রাব্বি এই গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো গত ৪ থেকে ৫ মাস আগে মাদক কেনা-বেচার টাকা ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অন্তঃকোন্দলের কারণে গ্রেফতারকৃতরা পেপার সানী গ্রুপ থেকে বের হয়ে গালকাটা রাব্বির নেতৃত্বে ‘গালকাটা রাব্বি গ্রুপ’ তৈরি করে। এর পর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মাদক কেনা-বেচাসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি হতো।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার প্রায় ১ মাস পূর্বে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মুরাপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করলে ক্যাম্পের মহিলারা তাকে উদ্ধার করে। গত ১৫ মার্চ গালকাটা রাব্বি গ্রুপের সাথে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পেপার সানী গ্রুপের মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে গালকাটা রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেয়ার পরিকল্পনা করে। এছাড়াও ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করলে বিষয়টি গালকাটা রাব্বি গ্রুপের সদস্যকে জানায়। বিষয়টি গালকাটা রাব্বি জানতে পারলে আরোও ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে এসময় গ্রেফতারকৃতরা জানতে পারে তারা একটি ইফতার পার্টিতে গিয়েছে।
তিনি জানান, গত ১৬ মার্চ নিহত ফয়সাল ও তার বন্ধু রানা স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টি শেষে রিক্সাযোগে বাসায় ফেরার পথে গ্রেফতারকৃত রাব্বির নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃতরা ওঁৎ পেতে থাকে। ঘটনাস্থলে পোঁছালে গ্রেফতারকৃতরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফয়সাল ও তার বন্ধু রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাতারি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরবর্তীতে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকায় গ্রুপের অন্য এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় বিষয়টি পার্টি করার মাধ্যমে উদযাপন করে।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন ও ভিকটিমের পরিবার ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিম ফয়সাল ও তার বন্ধু রানাকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম ফয়সালকে মৃত ঘোষনা করে এবং রানাকে গুরুতর আহত অবস্থায় একই হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিমের ফয়সালের পিতা বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গতকাল (২২ মার্চ) রাতে র্যাব-৪ ও র্যাব-১১ এর আভিযানিক দল গাজীপুর এবং নরসিংদী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ফজলে রাব্বিসহ প্রত্যেকের নামে এক বা একাধিক মামলা রয়েছে। তারা মিরপুর এলাকায় মারামারি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।