স্টাফ রিপোর্টার-
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ফাইরোজ অবন্তিকার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে প্রশাসনিক-একাডেমিকসহ সকল কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সহপাঠী আম্মানকেও সাময়িক বহিষ্কার করেছে জবি কর্তৃপক্ষ। ঘটনার তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (১৬ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চত করেছেন জবি ভিসি সাদেকা হালিম।
এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে ফাইরোজ অবন্তিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্ট করার কিছুক্ষণ পরই ওই শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নিহত ফাইরোজ অবন্তিকার ছোট ভাই।
নিহত ফাইরোজ অবন্তিকার তার স্ট্যাটাসে লেখেন, আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন অনলাইনে থ্রেটের ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানাভাবে ভয় দেখায় আম্মানের হয়ে যে আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার। আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস পাব না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে।
এই লোককে আমি চিনতামও না উল্লেখ করে অবন্তিকা আরও লিখেন, আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারী জাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে। আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎসাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডেকে নিয়ে ‘খানকি তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?’
আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিলো। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিকাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তে থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া আর সে কিনা শেষমেশ আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না
উপাচার্য সাদেকা হালিমের কাছে বিচার চেয়ে অবন্তিকা আরও লিখেন, ‘আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেছি। আমার ওপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেছে না, বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম! আর পোস্টমর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করছি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, সহ্য ক্ষমতার বাহিরে চলে গেছে।’
ফাইরোজ অবন্তিকার আত্মহত্যার বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমি আত্মহত্যার বিষয়টি শুনেছি, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাচ্ছি, জবি উপাচার্যও ক্যাম্পাসে আসতেছেন। এখন আমরা জরুরি মিটিং ডেকেছি। মিটিংয়ের পর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।