স্টাফ রিপোর্টার-
গাজীপুরের শ্রীপুরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের উপর হামলা করে দুই পুলিশ সদস্য’কে নৃশংসভাবে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় ৩ ডাকাতকে রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব-১ ও র্যাব-১০ এর যৌথ আভিযানিক দল অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ডাকাত দলের প্রধান মোঃ ইসমাইল সরদার ওরফে লিটন (৩৮) সহযোগী মোঃ কামরুল মিয়া (২০) ও মোঃ হানিফ ওরফে মাষ্টার (৪০)।
শুক্রবার (৮ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র। তাদের দলের সদস্য সংখ্যা ৮ থেকে ১০ জন। ইসমাইল এ ডাকাত চক্রটির প্রধান এবং হানিফ তার অন্যতম সহযোগী। তারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা বাড়ি ও দোকান ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এছাড়াও ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষা নদীতে বিভিন্ন বালুর বলগেটে ডাকাতি করতো ।
এছাড়াও তারা বিভিন্ন মামলায় কারাভোগের সময় কারাগারে থাকা অন্যান্য আন্তঃজেলা ডাকাতদের সাথে তাদের পরিচয় হয় এবং সেখানে তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিষয়ে বিভিন্ন কৌশল শিখে নিতো। পরবর্তীতে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে কারাগারে থাকা ডাকাতদের কাছ থেকে রপ্তকৃত কৌশল ব্যবহার করে ডাকাতি করে আসছিল।
তিনি বলেন, ডাকাত চক্রটি গত ৩ মার্চ রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ডাকাতির সময় গাজীপুরের শ্রীপুর থানার টহলরত পুলিশ সদস্যদের উপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে তাদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
গ্রেফতারকৃতদের ডাকাতির কৌশল হিসেবে তিনি জানান, দলের প্রধান ইসমাইল ও তার সহযোগী হানিফসহ ৬ থেকে ৭ জন ডাকাতির উদ্দেশ্যে
গত ৩ মার্চ দুপুরে কেরানীগঞ্জ থেকে একটি পিকআপযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় যায় এবং শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক স্থান পরিদর্শন করতে থাকে। ওইদিন রাতেই শ্রীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের সিংগারদিঘীর হাসিখালী ব্রীজ এলাকায় রাস্তার উপর গাছের গুড়ি ফেলে দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে গণ ডাকাতি শুরু করে।
কমান্ডার মঈন আরও জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর
থানা পুলিশ ডাকাতির সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছালে ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশ সদস্যদের উপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে । এসময় পুলিশ সদস্য কনস্টেবল রুহুল আমিন এর মাথায় এবং কনস্টেবল সেলিম মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে ডাকাতরা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের এক সদস্য রুবেল চলন্ত গাড়ীর সাথে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে আহত হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃতদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আসামী ইসমাইল ১০ থেকে ১২ বছর যাবৎ একটি কেমিক্যাল কোম্পানীর মালামাল রাজধানীর মিটফোর্ড মার্কেটে সরবরাহ করতো। সে ২০১৮ সালে কেরানীগঞ্জ এলাকার এক ডাকাত সদস্যের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে সে ডাকাতি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে ঐ মার্কেটে কেমিক্যাল সরবরাহের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় কেরানীগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় ডাকাতি করতো বলে জানা যায়। একপর্যায়ে সে নিজেই একটি ডাকাত চক্র গড়ে তোলার জন্য কেমিক্যাল সরবরাহের কাজ ছেড়ে দেয়। এসময় সে ডাকাতির কার্যক্রমে সুবিধার জন্য ছদ্মবেশে ইজিবাইক চালানো শুরু করে। তার বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার, কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ ডাকাতি সংক্রান্ত ৪টি মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় সে এক বছরের অধিক কারাভোগ করেছে। ইতিপূর্বে তার নেতৃত্বে ২০২৩ সালে ফরিদপুরে বেশকয়েকটি স্বর্ণের দোকান ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং সে এই মামলায় ০৭ মাস কারাভোগ করে গত মাসে জামিনে বের হয়ে পুনরায় ডাকাতি কার্যক্রম করতে থাকে।
গ্রেফতারকৃত হানিফ ওরফে মাস্টার গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এর সাথে একই এলাকায় বসবাস করতো। সে ২০১১ সালে ডাকাতি কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয় বলে জানা যায়। সে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এর অন্যতম সহযোগী ও ডাকাতির বিভিন্ন স্থান নির্ধারণ, কৌশল ও পরিকল্পনা করতো । ডাকাতির পরিকল্পনায় সে সিদ্ধহস্ত বলে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের নিকট তার মাস্টার উপাধি ছিল এবং সবাই তাকে মাস্টার বলে জানতো। সে ২০১৩ সালে হত্যা মামলায় ০২ বছরের অধিক সময় কারাভোগ করে । এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে এবং এসকল মামলায় কারাভোগ করেছে।
গ্রেফতারকৃত কামরুল ডাকাত দলের একজন অন্যতম সদস্য। গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এর সাথে প্রায় ৩থেকল ৪ বছর পূর্বে রাজধানীর জিনজিরা এলাকায় ভাড়া থাকার সময় তার পরিচয় সূত্রে সে ইসমাইলের ডাকাতি চক্রে যোগ দেয়। ডাকাতি কার্যক্রমকে আড়াল করতে সে দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। সে গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির জন্য সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে গ্রেফতারকৃত ইসমাইল এবং গ্রেফতারকৃত হানিফকে আগাম তথ্য দিয়ে ব্রিফিং প্রদান করতো। এজন্য সে গাজীপুর এলাকায় ডাকাতির পূর্বে পরিকল্পনা করার জন্য বিভিন্ন সময় গাজীপুর হতে জিনজিরায় গ্রেফতারকৃত ইসমাইল ও হানিফের নিকট আসতো এবং পুনরায় গাজীপুরে ফিরে গিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করতো ।