স্টাফ রিপোর্টার-
লক্ষীপুর জেলার ১৩ বছর বয়সী স্কুলছাত্রী স্মৃতি রানী সীমাকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামী মো. সাদ্দাম হোসেন রহিমকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব-৩ এর সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর পলাতক থাকার পর আসামি মোঃ সাদ্দাম হোসেন রহিম (৩৭) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। সে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর উত্তরা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের সে জানায় ডাকাত দলের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লাসহ আন্তঃজেলা ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতো। তারা ডাকাতির জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা করে ডাকাতির স্থান নির্ধারণ করে সবাই এক জায়গায় মিলিত হয়ে সুযোগ বুঝে ডাকাতি করতো। এ সময় তারা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের নৃশংস কর্মকান্ড করতো। এই ডাকাত দলটি বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষীপুর এলাকায় ১০ থেকে ১২ টি বাড়িতে ডাকাতি করেছে।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, লক্ষীপুর জেলার সদর থানা এলাকায় জনৈক কৃষ্ণলাল দেবনাথ তার স্ত্রী, পুত্রবধু এবং ৩ নাতনীদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গত ২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষ্ণলাল এর বাড়িতে মুখোশ পরে ১৪ থেকে ১৫ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। এবং তারা কৃষ্ণলাল এর পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে।
এ সময় তারা কৃষ্ণলাল দেবনাথ, তার স্ত্রী গীতা রানী ও পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্রদ্বারা বেদড়কভাবে পিঠিয়ে জখম করে একটি রুমে আটকে রাখে। পরে তারা কৃষ্ণলাল এর নাতনী ভিকটিম সীমাকে একটি কক্ষে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। শেষে ডাকাত দলটি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর ভিকটিমের পরিবারের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন সীমা ও আহতদের স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম স্মৃতি রানী সীমা মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় কৃষ্ণলাল দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ে ১৪ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে ডাকাতি, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার তদন্ত শেষে ২৫ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করে। মামলার ২০ জন আসামী বিভিন্ন সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালে আদালত ১৫ জনকে খালাশ প্রদান করেন এবং ১০ জন আসামীর মৃত্যুদন্ড রায় ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টে আপীল করা হলে ২ জন আসামীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং বাকী ৮ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ৪ জন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ১ জন পলাতক থেকে যায়। উক্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা তাকে করতে সক্ষম হয়।
আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি বলেও জানান তিনি।