স্টাফ রিপোর্টার-
বন্ধু পরিচয়ে গত ছয় মাসে শতাধিক চোরাই সিম দিয়ে প্রতারনার জন্য প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে ফোনে কল করেছে। কিছু কিছু ফোন কলে সফল হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় এক যুবক। কখনো জীনের বাদশা আবার কখনো বন্ধু পরিচয়ে এসব প্রতারণা সংগঠিত করছিল ওই যুবক।
ডিবি পুলিশ বলছে, অপরিচিত নাম্বার থেকে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে ফোন করা হয়। বলা হয়, বন্ধু চিনতে পেরেছিস? উত্তরে না, চিনতে পারছি না বলা হলে প্রতারক বলেন, তোর কোন বন্ধু বিদেশে থাকে? ভিক্টিম বিদেশ থাকা বন্ধুর নাম বলতেই, প্রতারক বন্ধুর রূপ ধারন করে। এরপর হঠাৎ করে দেশে অসছি বলে জানায় ভিক্টিমকে। সেই সঙ্গে বলা হয়, মা অসুস্থ ছিল আজকে হাসপাতালে মারা গেছে। জরুরী ভিত্তিতে কিছু টাকা পাঠাতে পারবি? উত্তরে হ্যাঁ জানাতেই অন্যান্য বন্ধুদের নাম্বার নেওয়াসহ তাদেরকে টাকা পাঠাতে অনুরোধ করতে বলতো এই প্রতারক। এভাবেই হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা।
গ্রেফতারকৃত আসামী হলেন, মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয় (২৭)। আসামি প্রতারণার কাজে নিজেকে জ্বীনের বাদশা বলেও পরিচয় দিতেন বলেও জানায় (ডিবি)। ঢাকা মেট্রোপলিটন মতিঝিল (গোয়েন্দা)বিভাগের খিলগাঁও জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সবুজবাগ থানা এলাকায় প্রতারণা মামলার ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ভুক্তভোগী মো. আমির হোসাইন মোল্লাসহ তার দুই বন্ধুকে আসামী মো. সাইফুল ইসলাম নিজেকে ভিক্টিমদের বন্ধু আতিকুল্লাহ শাহের পরিচয় দিয়ে ফোন করে তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানায় এবং জরুরী ভিত্তিতে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়ে তারা তিন বন্ধু মিলে তাৎক্ষনিক ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।
এরপর ভিক্টিমরা বুঝতে পারলে থানায় অভিযোগ করেন। সেই সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে।
তিনি আরও বলেন, আসামি এর আগেও একাধিকবার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে। আসামির পিসিপিআর পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ মোট ৯টি মামলা রয়েছে।
অনুসন্ধানের তথ্য জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, তার বাড়ী নীলফামারি জেলার ডিমলা থানাধীন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে সে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করে এবং পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়। পুরো নীলফামারি জেলায় সে জ্বীনের বাদশা নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে সে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের অংশে চলে যায়। সে প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই প্রতারণার সাথে সংশ্লিষ্ট আছে।
ডিবি প্রধান বলেন, এই কাজে তার কয়েকজন সহযোগীও আছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে এবং আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে।
তিনি আরও বলেন, এই দীর্ঘ ১০ বছরে সে কত জনকে প্রতারিত করেছে তার সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা না গেলেও গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা যায়, সে প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন ব্যক্তিকে প্রতারণার উদ্দেশে ফোন দিয়েছে। আমরা এদের মধ্যে অনেকের সাথেই যোগাযোগ করেছি যাদের অধিকাংশই প্রতারণার শিকার হয়ে বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছে।
প্রতারণার কাজে চুরি করা ফোনের ব্যাবহার করা হতো জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তার সহযোগী মির্জা গত ৩ জানুয়ারি নীলফামারি জেলার ডিমলা থানা এলাকার একটি নির্বাচনী মিছিল হতে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে তাকে এনে দেয়। প্রথমে সে ওই ফোনের বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে নেয় এবং পরবর্তীতে ওই ফোনের মাধ্যমে প্রতারণা করে।
যেভাবে প্রতারণা করে আসামি সাইফুল?
প্রথমে ভিক্টিমকে ফোন দেয় প্রতারক।
প্রতারক। বন্ধু চিনতে পেরেছিস?
ভিকটিম: না, চিনতে পারছি না।
প্রতারক: তোর কোন বন্ধু বিদেশে থাকে?
ভিকটিমঃ আতিক বলছিস?
প্রতারক। হ্যাঁ বন্ধু, আমি আতিক। বন্ধু আমি হঠাৎ করে দেশে অসছি। আমার মা অসুস্থ ছিল। আজকে হাসপাতালে আমার মা মারা গেছে। জরুরী ভিত্তিতে বিদেশে কিছু টাকা পাঠাতে পারবি?
ভিকটিম। হ্যাঁ পারব। কত টাকা লাগবে বল?
প্রতারক? ৭০০০০ টাকা পাঠিয়ে দে। আর বন্ধুদের নম্বরগুলো এই মূহুর্তে আমার কাছে নাই, ওদের নম্বরগুলো আমাকে দে। যদি পারিস কয়েকজনকে বল আমাকে এই নম্বরে কল দিতে।