স্টাফ রিপোর্টার-
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে পন্যবাহী ট্রাক থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে চাঁদাবাজির কারণে অযৌক্তিকভাবে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকায় অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানে পন্যবাহী ট্রাক থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয় বলে জানিয়েছে র্যাব।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানী কাওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অযৌক্তিকভাবে ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে নৃত্যপণ্য দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এজন্য আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমূখ ও পাইকারি বাজার এলাকায় পন্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা উত্তোলনের সময় হাতেনাতে ৫১ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। গতকাল শনিবার ভোররাতে একযোগে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।
রাজধানীর কাওরান বাজার, বাবুবাজার, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, ইত্তেফাক মোড়, টিটিপাড়া, কাজলা, গাবতলী ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলো, মো. জাবেদ, মো. আরিফ, আবুল হোসেন, বিল্লাল হোসেন, মো. আলী হোসেন, মো. রাকিব হাসান, মো. ফালান মিয়া, মো. সাকিব আলী, মো. বাবলু ও মো. রাজাসহ ৫১ জন।
তাদের কাছ থেকে নগদ এক লাখ ১২ হাজার টাকা, একটি লেজার রশ্মির লাইট, ৬টি সিটি কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যাকেট, ২টি অন্যান্য লাইট, ৪টি আইডি কার্ড, ৪১টি মোবাইল এবং বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায়ের রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে।
খন্দকার মঈন বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করে। গ্রেফতাররা তথাকথিত ইজারাদারদের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতি রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার উপর অবস্থান নেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভারদের থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রশিদও প্রদান করে থাকে।
ড্রাইভাররা তাদের চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাংচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধর সহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন হতে ২০০-৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকে। কখনো সিটি কর্পোরেশন, কখনো শ্রমিক সংগঠন, কখনো কল্যাণ সমিতি, কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে এই চাঁদা উত্তোলন করা হয়।
তিনি বলেন, মধ্য রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে তখন চাঁদা উত্তোলন শুরু হয়। একটি গ্রুপ চাঁদা উত্তোলন করে কথিত ইজারাদারদের কাছে জমা দেয়। তারা সিন্ডিকেটের মধ্যে টাকা ভাগ বাটোয়ার করে নেয়। চাঁদা উত্তোলনকারীরা প্রতি রাতে মজুরি হিসেবে ৬০০-৭০০ টাকা পান। প্রতিটি স্পট থেকে প্রতিদিন অন্তত লক্ষাধিক টাকা চাঁদা আদায় করে।
কমান্ডার বলেন, রমজানকে সামনে রেখে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। চাঁদাবাজিরে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত উপরের লেভেলের কয়েকজনের নাম পেয়েছি, আমরা তা যাচাই-বাছাই করছি। তারা যে সংস্থারই হোক অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ হোক, এমনকি আমাদের কোন সদস্য হলেও তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।