স্টাফ রিপোর্টার-
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ড্রেন নির্মাণকে কেন্দ্র করে
সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জেরে সোলেমান নামে
একজনকে হত্যার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলি র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র্যাব -৩ এর অধিনায় লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নজরুল ইসলাম (৪৫), সাব্বির (৩০),তাকবির (২৫), জাকির (৩২), জসিম উদ্দিন (৪৫), সেলিম উদ্দিন (৪২)।
অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার জয়শ্রী ইউনিয়নের অন্তর্গত শান্তিপুর এলাকায়, ড্রেন পুনঃনির্মাণ করার কারণে ইউপি সদস্য রাসেল ও তার লোকজনের উপর নজরুল তার সহযোগীদের নিয়ে হামলা চালায়। মূলত সাতারিয়া-পাথারিয়া হাওরের বোরো ধানের জমিতে পানি সেচের জন্য ড্রেনটি নির্মাণ করা হয়। গ্রেফতারকৃত নজরুল ও তার লোকজন অ্যাক্সেভেটর দিয়ে মাটি তুলে ড্রেনটি ধ্বংস করে দেয়। ঘটনার দিন ২৬ ডিসেম্বর রাসেল মেম্বারের লোকজন তাদের স্বত্বদখলীয় হাওরের বোরো জমিতে পানি সেচের জন্য ড্রেনটি পুনঃরায় নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
খবর পেয়ে নজরুলের নেতৃত্বে সাব্বির, তাকবির, জাকির, মিজান, নাঈম, জসিম উদ্দিন, সেলিম উদ্দিন, নয়ন, আক্কল এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৮ ও ১০ জন দেশীয় অস্ত্র দা, রামদা, রড, রডের পাইপ ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপর নৃশংস হামলা চালায়। হামলায় ভিকটিম সোলেমানসহ মোট ১০ জন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী আহত ব্যক্তিদেরকে উদ্ধার করে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
ভিকটিম সোলেমানসহ মোট ৬ জনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিকেলে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় গত ৯ জানুয়ারি ভিকটিম সোলেমান মৃত্যুবরণ করে।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় গত ৩ জানুয়ারি ভিকটিমের চাচাতো ভাই দীন ইসলাম বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ভিকটিম সোলেমানের মৃত্যু হওয়ার পর গত ১০ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে দন্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারা সংযোজিত হয়ে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গন্য হয়। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে ধর্মপাশায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে। নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। র্যাব-৯ উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গ্রেফতার এড়াতে আসামিরা নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরে গোয়েন্দা দল বিষয়টি র্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দলকে জানায়।
র্যাব-৩ এর গোয়েন্দা দল আসামিদের গ্রেফতারে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে এবং সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত হওয়ার পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের মূলপরিকল্পনাকারী নজরুল ইসলাম এবং তার অন্যান্য সহযোগীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, আসামি নজরুল তার আত্মীয়স্বজন এবং অনুসারীদের সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তিপুর এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে সাধারণ মানুষের জমিজমা জবরদখল করে আসছিল। ভিকটিম সোলেমানের চাচাতো ভাই রাসেল আহমদ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। রাসেল মেম্বার নজরুলের এ সকল অপকর্মের প্রতিবাদ করায় নজরুল রাসেল মেম্বারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। এর আগে শান্তিপুর গ্রামের একটি মসজিদের উন্নয়ন কাজের জন্য নদীপথে আনিত বালু মসজিদ ঘাটে আনলোড করার সময় নজরুল বাঁধা প্রদান করে। ঐদিন ভিকটিম সোলেমান তার চাচাতো ভাই রাসেল মেম্বার এর পক্ষ হয়ে নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এতে নজরুল সোলেমানের উপর ক্ষিপ্ত হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে নজরুলের কুকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে ভিকটিম সোলেমান নজরুল এর চক্ষুশূলে পরিণত হয়। একারণেই নজরুল ভিকটিম সোলেমানকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। নজরুল রাসেল মেম্বার এবং সোলেমানকে উচিৎ শিক্ষা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে হুমকি প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত নজরুল শান্তিপুর এলাকার একজন চিহ্নিত অপরাধী। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং দখলদারিত্বের জন্য নজরুল বিভিন্ন লোকজনকে হুমকি প্রদান করতো। ঘটনার দিন পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী নজরুল নিজেই ভিকটিম সোলেমানের মাথায় রামদা দিয়ে কোপ দিলে মাথার ডান পার্শ্বের তালুতে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়ে সোলেমান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। নজরুলের নির্দেশে অন্যান্য সহযোগীরা মাটিতে পড়ে থাকা সোলেমানকে নৃশংসভাবে আঘাত করতে থাকে। এতে সোলেমান গুরুতর আহত হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬ নং এজাহারনামীয় আসামি নাঈম (২২) গ্রেফতার হলে নজরুলসহ অন্যান্য আসামিরা নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানী ঢাকায় এসে আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পলাতক ০৬ জন হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এজাহারনামীয় আরও ৩ জন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতারে র্যাবের গোয়েন্দা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত নজরুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানানো হয়। এরমধ্যে ধর্মপাশা থানায় ১ টি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং ২ টি মারামারি মামলা রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন এবং সেলিম উদ্দিনের নামেও ধর্মপাশা থানায় একাধিক মারামারি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।