স্টাফ রিপোর্টার-
আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নুরুল হক (৬৭)। তার ব্যবসায় স্থানীয় সেলিম নামের এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাধা দিয়ে আসছে।
এবার সেই প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই অপর একজনের পরামর্শে রাজধানীর শাহজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ীকে খলিলকে হুমকি দেন।
কম দামে মাংস বিক্রি করে আলোচনায় আসা ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে সেলিম পরিচয়ে হুমকি দিলে ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোন প্রতিবন্ধকতা বা কোন বাধার সম্মুখিন হবে না। উল্টো সেলিমই বিপদে পড়বে।
স্থানীয় ক’জন গরুর মাংস ব্যবসায়ী যারা সাড়ে সাত শ’ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করে আসছিলেন তাদের মাধ্যমে খলিলের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন।
নিজের সুবিধা বিবেচনায় মাংস ব্যবসায়ী খলিলের মোবাইল নাম্বারে ডিস ব্যবসায়ী নুরুল কল দিয়ে সেলিম পরিচয়ে হত্যার হুমকি দেন। এরপর শনিবার(২৭ জানুয়ারি) রাতে হত্যার হুমকির ঘটনায় ঢাকার আশুলিয়া থেকে নূরুল হক ও তার সহযোগী ইমন নামে দুজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
রোববার(২৮ জানুয়ারি) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতে করে সীমিত ও নিম্মআয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যায়।
গত ১৯ নভেম্বর হতে রাজধানীর শাজাহানপুরের মাংস ব্যবসায়ী খলিল তার ‘খলিল গোস্ত বিতান’ এ ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করে। এটা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
মাংস ব্যবসায়ী খলিলের দেখাদেখি আরও কিছু মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করে। পরবর্তীতে গত ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এমন সিদ্ধান্তে বাজারে ফিরে আসে স্বস্তি। এসময় যে সকল মাংস ব্যবসায়ীরা ন্যয্য মূল্যে মাংস বিক্রি করে, মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকে। এছাড়াও কিছুদিন পূর্বে রাজশাহীর বাঘার আড়ানী হাটে ন্যয্য মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ী খুন হওয়ার ঘটনা ঘটে।
গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর শাহাজাহানপুরের আলোচিত মাংস ব্যবাসয়ী খলিলুর রহমানের মোবাইল ফোনে অপর একটি মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে ও তার ছেলেকে দুদিনের মধ্যে গুলি করে হত্যার হুমকিসহ অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়। এছাড়াও খলিল এবং তার ছেলেকে হত্যা করার জন্য গুলি ও পিস্তল রেডি করা হয়েছে জানিয়ে তার মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা ছাড়া লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
এর প্রেক্ষিতে গত ২০ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিল রাজধানীর শাহাজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন; যার ডায়েরি নম্বর-৮১৩। এঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৩ ও র্যাব-৪ এর দল ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাংস বিক্রেতা খলিলের কাছে চাঁদা দাবী করা এবং খলিল ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি ও নির্দেশদাতা মো. নুরুল হক (৬৭) ও তার অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ ইমন (২২)কে গ্রেফতার করে৷ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা হুমকির ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গ্রেফতার নুরুল হক দীর্ঘদিন ধরে আশুলিয়া থানার পাথালিয়া ইউনিয়নের চারিগ্রাম এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট লাইনের ব্যবসার করে আসছে। স্থানীয় এলাকায় তার প্রায় ৫শ ডিস এবং ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ রয়েছে। এ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ ছিলো। বিরোধের জের ধরে কিছুদিন পূর্বে তার প্রতিপক্ষের সাথে মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে একজন তাকে আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার প্রদান করে তাকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দিতে বলে। যার বিনিময়ে সে তার স্থানীয় এলাকায় ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায় কোন প্রতিবন্ধকতা বা কোন বাধার সম্মুখিন হবে না।
ব্যবসায়ীক সুবিধার লক্ষ্যে গ্রেফতার নুরুল হক গত ১৮ জানুয়ারি মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে ফোন করে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি এবং কম দামে মাংস বিক্রি করলে তাকে হত্যার হুমকি প্রদান করে।
নুরুল হক মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি প্রদানের সময় চাঁদা দাবির পাশাপাশি তার ব্যবসায়ীক প্রতিপক্ষ সেলিমের নাম উল্লেখ করে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে একই দিনে নুরুল ও ইমনকে একটি ফোন ধরিয়ে মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে গালাগালি করতে বলে। ইমন নুরুলের কথামতো খলিলকে ফোন দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে এবং তাকে দুই দিনের মধ্যে হত্যা করবে বলে গুলি ও পিস্তল রেডি করে রেখেছে বলে জানায়। এছাড়াও ইমন খলিলের মোবাইল ফোনে পিস্তল, গুলি, রামদা এবং মাথা কাটা লাশের ছবি পাঠিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। পরবর্তীতে হুমকি প্রদানকৃত মোবাইল ও সিম কার্ডটি পানিতে ফেলে দেয়।
নুরুল হক ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় বসবাস করে এবং ডিস ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। তিনি ডিস ব্যবসার পাশাপাশি কৃষি কাজ করতেন। নুরুল হক এলাকায় বিভিন্নজনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। নুরুলের নামে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় হত্যার হুমকি, চাঁদাবাজি এবং মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪টির অধিক মামলা রয়েছে।
ইমন দীর্ঘদিন যাবত গ্রেফতার নুরুলের ডিসের ব্যবসার কাজে সহায়তা করতো। এছাড়াও সে গ্রেফতার নুরুলের সাথে এলাকায় বিভিন্ন জনকে হুমকি প্রদানের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জমি দখল সহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও সে মাদকাসক্ত ছিল বলে জানা যায়।