স্টাফ রিপোর্টার-
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মিরপুর রোড এলাকায় এনজিও ‘সিদীপ’ এর নিরাপত্তা প্রহরী জুয়েল মিয়াকে হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতের নাম – মো: আক্তার হোসেন (২০)। সে দীর্ঘ সময় ধরেই ভবনটিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে আসছিল।
পুলিশ বলছে, আক্তারের অসামাজিক কার্যকলাপের তথ্য প্রমান পায় নিহত জুয়েল মিয়া। এ বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয়। এছাড়াও একই ভবনে দায়িত্ব পালনের সময় বিভিন্ন কারনে তাদের মধ্যে ইতিপূর্বেও মনোমালিন্য ছিল। অসামাজিক কার্যকলাপের তথ্য আক্তার হোসেন কর্তৃপক্ষ কে জানাতে পারে’ এমন ভয় থেকেই জুয়েল কে ঘুমন্ত অবস্থায় লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে আক্তার।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারী) সকালে রাজধানীর খিলজি রোডে অবস্থিত তেজগাঁও বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিসি (তেজগাঁও) আজিমুল হক।
ডিসি আজিমুল হক বলেন, আসামী আক্তার হোসেন বিগত দেড় বছর যাবত সিদীপ এনজিও-তে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করে আসছিল।
গত ১ জানুয়ারী থেকে নিহত জুয়েল মিয়া একই প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে যোগদান করে। ডিউটি চলাকালে প্রায় সময়ই জুয়েল মিয়া অফিসের বাইরে যেতে চাইলে আসামী আক্তার হোসেন তাতে বাধা দিত। এতে উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। আক্তার হোসেন আগে থেকে এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার সুবাদে কর্তৃপক্ষের সাথে তার সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সে এটির সুযোগ নিয়ে অন্যদের উপর নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করত। জুয়েল মিয়া এটি মেনে নিতে পারেনি।
ডিসি আরও জানান, গত জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে আসামী আক্তার তার বান্ধবীকে রাতে অফিসে নিয়ে আসে এবং জুয়েল তাদেরকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে জুয়েল মিয়া আক্তার হোসেনকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এবং কর্তৃপক্ষকে বলে দেয়ার হুমকি দেয়। এনিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ জন্মায়। ঘটনার দিন আসামী আক্তার ও জুয়েল সঙ্গীয় দুই জন গার্ড রাত ৮ টায় ডিউটি শুরু করে। আনুমানিক রাত ১১ টায় জুয়েল আক্তার হোসেনের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়।
ওইদিন রাত আনুমানিক ১ টায় আসামী আক্তার হোসেন অফিস পিওন সতেজ চাকমা ও আল আমিনকে বিষয়টি জানালে তারা নিচে আসে। এসময় জুয়েল মিয়া মোবাইলটি আল আমিন এর কাছে জমা দেয়। ভোর অনুমানিক ৫ টায় জুয়েল মিয়া বিল্ডিংয়ের দক্ষিণ পার্শ্বে চেয়ারের উপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় আসামী জুয়েল মিয়া বিল্ডিংয়ের পাশে পড়ে থাকা একটি লোহার পাইপ নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। হত্যার পর ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য লাশটি টেনে হিচড়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভিকটিমের হাত দড়ি দিয়ে বেধে কম্বল মুড়িয়ে সাব-স্টেশনের ভিতরে লুকিয়ে রেখে রুমটি বাইরে থেকে লাগিয়ে দেয়। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি ফেলে দেয়।
ডিসি আজিমুল হক বলেন, লাঠির আঘাতে ভিকটিম জুয়েলের মাথা, চোখ, মুখমন্ডলসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত যখম হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাতের ফলে ভিকটিমের মৃত্যু হলে আক্তার হোসেন লাশ গোপন করার উদ্দেশ্যে তার হাত বেধে কম্বল মুড়িয়ে পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভিতর ঢুকিয়ে রুমটি বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয়।
সিসিক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ পর্যালোচনা করে ডিসি জানান, দেখা গেছে ওইদিন ভোরে গার্ড আক্তার হোসেন একটি লাঠি হাতে বিল্ডিংয়ের দক্ষিণ পার্শ্বে চেয়ারের উপরে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে থাকা নিহত জুয়েল মিয়ার(২০) দিকে এগিয়ে যায় এবং লাঠি দিয়ে ভিকটিম জুয়েল মিয়াকে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। এতে ভিকটিম জুয়েল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে পরার পরেও আক্তার তাকে নৃশংসভাবে আঘাত করতে থাকে। পরবর্তীতে আক্তার ভিকটিমের হাত ধরে টেনে হিচড়ে বিল্ডিংয়ের পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের দিকে নিতে থাকে। টেনে হিচড়ে নেয়ার ময়ও আক্তার তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ভিকটিমকে দফায় দফার আঘাত করতে থাকে।
পরবর্তীতে সিকিউরিটি আক্তার হোসেন পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন আলামত নষ্ট করে। এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের মা থানায় হাজির হয়ে ছেলের হত্যার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে মামলাটি রুজু হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্ত গার্ড আক্তার হোসেন আত্মগোপনে চলে যায়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও বিশ্বস্ত সোর্সের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গার্ড আক্তারকে গতকাল রাতে ঢাকার নাজিরাবাজার এলাকার একটি কারখানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবী, অভিযুক্ত আক্তার তার সহকর্মী জুয়েল মিয়াকে হত্যা ও লাশটি গোপন এবং আলামত নষ্ট করার বিষয়টি স্বীকার করেছে।
জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি দুপুরে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানতে পারে, মোহাম্মদপুর থানাধীন মিরপুর রোডস্থ বেসরকারী এনজিও ‘সিদীপ’ এর নীচ তলায় স্থাপিত পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভেতর বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তা ডিউটিতে নিয়োজিত একজন সিকিউরিটি গার্ডের মৃতদেহ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে।
সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ দ্রুত
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং বিল্ডিংয়ের পেছনের অংশে স্থাপিত ইলেক্ট্রিক পাওয়ার সাব-স্টেশন রুমের ভেতর হাত বাধা গুরুতর রক্তাক্ত অবস্থায় একজন সিকিউরিটি গার্ডের মৃতদেহটি উদ্ধার করে।