স্টাফ রিপোর্টার-
ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনের টিকিট বিক্রি কর্মী ফারুক। একই পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন। সন্তান অসুস্থতার কারণে নিজামের কাছে পাওনা টাকার জন্য চাপ দেওয়ায় নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন ফারুক। হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ ঘাতককে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মূল পরিকল্পনাকারী মো. নিজাম উদ্দিন (৩৬), মো. সোহাগ (৩৮), মো. জহিরুল ইসলাম (৪৮), মো. রনি হোসেন (২৩) ও ৫। মো. বাদশা (২৩)। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত স্ক্রু ড্রাইভার ও লোহার রড উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারী) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, নিজাম এবং ভুক্তভোগী ফারুখ হোসেন এক সাথেই টঙ্গীর চেরাগআলী এালাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামক একটি পরিবহনের কাউন্টারে কাজ করত। দীর্ঘ ৫/৬ বছরের পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে প্রায়ই লেনদেন হতো। নিহত ফারুক তার পাওনা টাকা পেতে চাপ সৃষ্টি করায় নিজাম তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে পরিকল্পনার অংশ অনুযায়ী ঢাকা এক্সপ্রেসের একটি খালি বাসে ফারুক হোসেনকে তুলে নিয়ে পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় যায়। সেখান থেকে ফারুককে বাসে উঠানোর পর গ্রেফতারকৃত সোহাগ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে গুরুতর আঘাত করে। এসময় বাদশাহ বাসের টুলবক্স থেকে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে ফারুখের এক চোখ উপ্রে ফেলে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এরপর ৩০০ ফিট থেকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে পাশে রঘুরামপুর এলাকার রাস্তার পাশে ফারুকের লাশটি ফেলে বাসটি নিয়ে লক্ষীপুরের উদ্দেশ্যে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যায়।
ঘটনা দিনের বিষয়ে কমান্ডার মঈন জানান, গত ৮ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনের কাছে ফারুক পাওনা টাকা চাইলে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। ফারুকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম তাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য গ্রেফতারকৃত সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশাসহ আরও কয়েক জনের সাথে পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওইদিনই রাত আনুমানিক সাড়ে ৭.৩০ টায় নিজাম মোবাইলে ফোন করে ফারুককে টাকা নেওয়ার জন্য কাউন্টারে আসতে বলে। পরবর্তীতে ফারুক টাকা নিতে কাউন্টারে আসলে নিজামের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে সোহাগ, জহিরুল, রনি ও বাদশা ভিকটিমকে মারধর করে বাসে তুলে নিয়ে যায়। এর পর তাকে হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, গত ০৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ১০ টায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি চোখ উপড়ানো অজ্ঞাতনামা মৃতদেহ দেখে স্থানীয় লোকজন নিকটস্থ র্যাব ক্যাম্পেকে অবহিত করে।
পরবর্তীতে র্যাব-১ ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক-ভাবে মৃতদেহের সাথে থাকা মানিব্যাগে বিভিন্ন নথিপত্র এবং ওআইভিএস ডিভাইস এর মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা মৃতদেহটির নাম ও পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয় এবং পরিচয় নিশ্চিত হয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের মা বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ১১ জানুয়ারি রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১১ এর সহায়তায় র্যাব-১ এর যৌথ
আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুরের টঙ্গী এবং লক্ষীপুরের রায়পুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী ফারুক স্ত্রী সন্তানসহ পরিবারে নিয়ে রাজধানীর তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় বসবাস করতো। সে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী এলাকায় ঢাকা এক্সপ্রেস নামের একটি পরিবহনের টিকিট কাউন্টার ম্যান’ হিসেবে কাজ করতো। টিকিট বিক্রির লভ্যাংশ দিয়েই নিজের ও পরিবারের খরচ চালাতো সে।
র্যাব বলছে, গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিন ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ৭ বছর যাবৎ কাউন্টার ম্যানেজার হিসেবে গাজীপুরের টঙ্গী চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ডে চাকরী করতো। ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় ১টি হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত বাদশা গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি গ্রীল ওয়ার্কশপে কাজ করতো। তার সাথে গ্রেফতারকৃত নিজাম উদ্দিন ও রনির পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে সখ্যতা ছিল। এছাড়া গ্রেফতারকৃত রনি ঢাকা এক্সপ্রেস ও লাবিবা ক্লাসিক পরিবহনের টঙ্গী স্টেশনের কাউন্টার মালিক। সোহাগ ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ১৭ বছর যাবৎ সুপারভাইজার হিসেবে চাকরী করতো। তার বিরুদ্ধেও ঝালকাঠি, রাজাপুর থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত জহিরুল ইসলাম ঢাকা এক্সপ্রেস পরিবহনে ৪ বছর যাবৎ ড্রাইভার হিসেবে চাকরী করতো। তার বিরুদ্ধে লক্ষীপুরের সদর থানায় ১টি মামলা রয়েছে।