স্টাফ রিপোর্টার-
রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা শ্রী কাজল চন্দ্র মহন্ত (৩২)। পেশায় একজন রেন্টেকারের গাড়ি চালক। গত ১৪ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে দিনভর যাত্রী পরিবহন শেষে বাসায় ফিরছিলেন। রাজধানীর কলাবাগন থানার কারওয়ান বাজার সোনারগাও মোড়ে পান্থপথে যাওয়ার পথে ব্যক্তি গাড়ি থামানোর সংকেত দেন। গাড়ি থামালে একজন এগিয়ে এসে জানান, তার এক স্বজন অসুস্থ। রাতে গাড়ি পাচ্ছেন না। তাই গাড়ি চালক কাজলকে সাভারের হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন ওই ব্যক্তি।
মানবিক দিক বিবেচনায় যেতে রাজি হলে চলে দরদাম। পরে ৯০০ টাকা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রাজি হলে উঠে পড়েন পাঁচজন। গাড়িটি হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি যাওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা চালকের গলায় ছুড়ি ও গামছা পেচিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে চালক কাজলকে গাড়ির পেছনের সিটে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয় ছিনতাইকারীরা। পরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চালক কাজলকে গাজীপুর কালিয়াকৈর রেল গেট এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়। যাওয়ার সময়ে তার মোবাইল কিংবা টাকা পয়সা না নিলেও মোবাইল নম্বর নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা। পরবর্তীতে এই মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার নামে আবারও টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা।
একই কায়দায় রাতের আধাঁরে পণ্যবাহী ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে পিকআপ হারিয়েছেন মো. দেলোয়ার। তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজার থেকে আদা রসুনের বস্তা নিয়ে গাড়িপুর যাচ্ছিলেন। পথে আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকায় এই চক্রের কবলে পড়েন তিনি। একটি প্রাইভেটকার দিয়ে তার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে তার হাত-পা বেঁধে মালামাল ভর্তি পিকআপ ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আর দেলোয়ারকে একটি পুকুরে ফেলে দেন। যদিও নিজের চেষ্টায় পুকুরে ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষাপান দেলোয়ার।
রাজধানীর মিন্টো রোডে কথা হয় দুই গাড়ি চালকের সঙ্গে। তাদের কথায় উঠে আসে সড়কে যাত্রীবেশে গাড়ি ছিনতাই চক্রের দৌড়াত্ব ও নিষ্ঠুরতা। অস্ত্রের মুখে প্রাইভেটকার ছিনতাই এরপর ছিনতাইকরা প্রাইভেটকার নিয়ে মালবাহী পিকআপ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. রানা (৩০), মো. বিশাল (২৩), মো. রুবেল (২২), মো. রাব্বী (২২) ও মো. নয়ন ইসলাম (২৪)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা প্রাইভেটকার, পিকআপ, চারটি মোটরসাইকেল ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গতকাল তাদের রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
রবিবার ( ২৪ ডিসেম্বর ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, সড়কে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামার সংকেত দিয়ে অসুস্থ যাত্রীর স্বজনবেশে গাড়িতে উঠে অস্ত্রের মুখে গাড়ি ছিনতাই করে। ছিনতাইকরা গাড়ি ফেরত দেওয়ার নামে আবারও টাকা আদায় করত। এই মামলায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে গাড়ি পেরত দেওয়ার কথা বলে ৬০ হাজার টাকা আদায় করে। এরপর সেই প্রাইভেটকার ব্যবহার করে মালবাহী পিকআপ ছিনতাই করে। চক্রের সদস্যরা ছিনতাই করা পিকআপ দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিবির তেজগাঁও বিভাগ তদন্তে নেমে এই সকল অপরাধের সন্ধান পায়।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলনে, এই চক্রের সদস্যরা একটা সময়ে মোবাইল ছিনতাই করত। এরপর তারা গাড়ি ছিনতাই শুরু করে। সাধারণত তাদের সবার পেশা লেগুনা চালক ও হেলপার হিসেবে কাজ করে। তারা ধারালো অস্ত্র ও মুখে ব্লেড রাখে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারের পর তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। দুই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কলাবাগান ও আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়েরের পর ডিএমপি গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম ছায়া তদন্তে নেমে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) লিডার এম. রাকিবুল হাসান ভূঞা’র নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতরা করা হয়।