স্টাফ রিপোর্টার-
পাকিস্তান ও ভারতের নাগরিক ও বাংলাদেশিরা মিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন ভার্চুয়াল দুনিয়ার ফাঁদ হানিট্র্যাপ। ফাঁদের আড়ালে থানা চক্রের সদস্যরা সমাজের নানা শ্রেনি পেশার মানুষকে ফাঁদে ফেলে সাধারণ ছবি এডিট করে আপত্তির ছবি বানিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিত। এই চক্রের বাংলাদেশি দুই এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাইবার ক্রাইম এন্ড স্পেশাল (দক্ষিণ) বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. টিপু সুলতান ও মো. মোসলেম রানা। গত বুধবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর বনানীর কড়াইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ডিবি বলছে,অনলাইনে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে কথা বলার নামে ভিডিওকলে আসে। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও নিয়ে সেগেুলো এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিত। চক্রের ফাঁদে পড়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়েছেন।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, ফেসবুকে ভারতীয় শিক্ষার্থী পরিচয়ে বাংলাদেশী তরুণের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে। পরবর্তীতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে উভয় ঘনিষ্ঠ হয়ে নিয়মিত ভিডিও কলে কথা বলার সময়ে ঘনিষ্ঠ মূহুর্তের বেশকিছু ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রাখে। এরপর সেগুলোকে হাতিয়ের হিসেবে ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এরপর ভুক্তভোগীর কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগী তরুণ মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তার এডিট করা নগ্ন ছবি ও ভিডিও ডিলেট করে দেবে বলে বিভিন্ন বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে প্রতারকের বিকাশ নম্বরে ৭ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করে সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইমের দক্ষিণ বিভাগ। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যায়, এই অপরাধের নানা রহস্য। তারা দুজনেই কলেজ শিক্ষার্থী। টিপু রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ও মোসলেম রানা তিতুমীর কলেজে স্নাতক কলেজের শিক্ষার্থী। তারা পড়াশোনার জন্য কড়াইলে এলাকায় থাকতো। এই চক্রটি চাকরি জীবি, শিক্ষার্থীসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিতদের টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদ পাতত। এরপর এডিট করা ছবি/ ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিত।
এই চক্রে ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিকরা জড়িত জানিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, এই চক্রের মাস্টারমাইন্ড ভারতীয় শাকিল। সে বিভিন্ন লোন অ্যাপস থেকে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের যোগাযোগের নাম্বার ও ফেসবুক লিংক সংগ্রহ করত। এরপর সুন্দরী তরুণীদের দিয়ে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ব্লাইকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিত। আর এজন্য তারা ভুয়া ইউপিআই (ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেসে তাত্ক্ষণিক রিয়েল-টাইম অর্থপ্রদান ব্যবস্থা) ব্যবহার করত। যার লিংক পাঠানো হত বাংলাদেশি এজেন্ট টিপুকে। টিপু ইউপিআই পাঠায় পাকস্তিানি এজেন্ট পারভজকে। পারভেজ ভুক্তভোগীদেরকে কল দিয়ে/ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় কর। সেই টাকা পাঠানো হত শাকিল। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকার ২৫ শতাংশ করে পেতেন এজেন্টরা।
শিক্ষার্থী থেকে তারা যেভাবে বিদেশি প্রতারক চক্রের এজেন্ট: গ্রেফতার দুই শিক্ষার্থী একই এলাকায় বসবাস করার সূত্রে পরিচিত। তারা দ্রুত সময়ে বেশি উপার্জনের আশায় প্রতারণায় জড়িয়ে যায়। এরপর ভারতীয় নাগরিকদের প্রস্তাবে রাজিয়ে হয়ে এই চক্রের বাংলাদেশি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বিকাশের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে আদায় করা টাকা নিজেরা ২৫ শতাংশ রেখে ভারতীয়ে এজেন্টকে পাঠিয়ে দিত।
অনলাইনে ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে ডিআইজ হারুণ বলেন, অপরিচিত ব্যক্তিদের অনলাইনে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা। পাশাপাশি অপরিচিতদের সঙ্গে ভিডিও কলে ভিডিও কলে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে অভিনব এই প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছেন ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইমের (দক্ষিন) ফিনান্সিয়াল এন্ড সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি মো. সাইফুর রহমান।