স্টাফ রিপোর্টার-
বিবাহীত জীবনে দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়ায় স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কলহের সুরহা করতেই বাচ্চা চুরি করেন ময়না বেগম। গত রবিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার ৬ দিন পর শনিবার (২৫ নভেম্বর) ৩ মাস বয়সী শিশু বাচ্চা জুবায়েদা আক্তার’ কে উদ্ধার করে ডিএমপির কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এসময় ময়না বেগম’কে আটক করা হয়েছে।
শনিবাার সন্ধ্যায় ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো.জাফর হোসেন নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, অপহরণকারী ময়না বেগম কোন অপহরন চক্রের সদস্য কিনা তার তদন্ত চলছে এবং তার দেওয়া বক্তব্য কতটুকু সত্য তা যাচাই শেষে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার বরাত দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলার বাদী মোঃ জুনাইদ আহম্মেদ এর নববাজাতক কন্যা জুবায়েদা আক্তার’কে তার স্ত্রী ও শাশুড়ী গত ১৯ নভেম্বর (রবিবার) সকালে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল আলট্রাসনোগ্রাফি করানোর জন্য নিয়ে যায়। সেখানে অজ্ঞাতনামা একজন মহিলা (বোরকা পরিহিত এবং মুখে মাক্স লাগানো) সহ অন্যান্য অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের সহায়তায় জুবায়েদা আক্তারকে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাদীর আবেদনে মামলাটি রুজু হয়।
মামলাটি রুজু হওয়ার পর শিশু ভিকটিম জুবায়েদা আক্তারকে উদ্ধারের জন্য কোতয়ালী থানা পুলিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় শিশু ভিকটিম জুবায়েদা আক্তার এর ছবি প্রচার করে।
শিশু বাচ্চাটি’কে চুরির প্রক্রিয়া তুলে ধরে তিনি জানান, আসামী ময়না বেগম (৩৭) মিটফোর্ড হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের পার্শ্বে ওয়েটিং রুমে আলট্রাসনোগ্রাফি টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহের জন্য বসে ছিলেন। ঐ সময় শিশু ভিকটিম জুবায়েদা আক্তার’কে তার নানী বিউটি বেগম কোলে নিয়ে পাশেই বসে ছিলেন। অপহরণকারী ময়না বেগম নিঃসন্তান হওয়ায় বাচ্চাটিকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। শিশু ভিকটিমের নানী পানি কেনার জন্য দোকানের কাছে গেলে অপহরণকারী ময়না আক্তার তখন তার পিছন পিছন হেটে অনুসরন করতে থাকে। দোকানের পানি কিনতে উদ্যত হলে অপহরণকারী ময়না বেগম কৌশলে ভিকটিম জুবায়েদা আক্তারকে অপহরণ করে নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে নৌকায় করে বুড়ি গঙ্গা নদী পাড় হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া গ্রামে তার স্বামীর বাসায় যায়। এরপর ঐদিনই তার বাবার বাসা খিলগাঁও থানাধীন ত্রিমোহনী এলাকায় চলে আসে। অপহরণকারী নিঃসন্তান হওয়ায় তার কোলে বাচ্চা দেখে স্থানীয় লোকজন বলা বলি শুরু করলে অপহরণকারী ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে পরে।
ডিসি জাফর আহমেদ আরও জানান, লোকমুখে কথা কানা কানি তে ভয় পেয়ে সে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তার ভাইয়ের মাধ্যমে পুলিশকে জানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে কোতয়ালী থানা পুলিশ ভিকটিম জুবায়েদা আক্তার (০৩ মাস) ‘কে উদ্ধার করে নবজাতক শিশু অপরণকারী ময়না বেগম (৩৭)’ কে গ্রেফতার করা থানায় নিয়ে আসে।
অপহরনকারীকে বক্তব্যের ববর্ননা তুলে ধরে উপ-পুলিশ কমিশনার মো.জাফর হোসেন বলেন, তার বিবাহীত জীবন প্রায় ১৩ বছরের কিন্তু সে নিঃসন্তান। এ জন্য অপহরনকারীর স্বামীর সাথে পারিবারিক দন্দ কলহ লেগেই থাকত। সর্বশেষ তার স্বামীর সাথে অপহরনের দিনে ঝগড়া করে মিটফোর্ড হাসপাতালে তার আল্ট্রাসনোগ্রাফি টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করতে এসে সু-কৌশলে ভিকিমের নানীর কোল হতে ভিকটিম জুবায়েদা আক্তারকে নিজের কোলে নিয়ে অপহরন করে পলিয়ে যায়।