স্টাফ রিপোর্টার-
ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর ‘মৃত্যুর’ পর পলাতক তার কথিত প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনকে আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
আত্বীয়’ত্বার সম্পর্কের সূত্র ধরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় জিয়াউদ্দিন রুফির। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত হিমুর উত্তরার বাসায় যাতায়াত করতেন। এছাড়া বিগো অ্যাপসে জুয়া খেলতে জিয়ার কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন অভিনেত্রী হিমু। সঙ্গত কারনেই মাঝে মাঝেই তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হতো। সময়ে অসময়ে জিয়া’কে ব্লাকমেইল করতেন তিনি।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে জিয়াউদ্দিনকে রাজধানীর বংশাল থেকে আটক করে র্যাব।
বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
কমান্ডার মঈন বলেন, অভিনেত্রী হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় শুক্রবার একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।
শুক্রবার মধ্যরাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বংশাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি ওরফে উরফি জিয়া (৩৭) কে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন’কে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোন এর সাথে জিয়াউদ্দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা জনিত কারনে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর সাথে ভিকটিম হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সাথে জিয়াউদ্দিন এর বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিবাহ করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং বিগত ৪ মাস পূর্বে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন হিমু’কে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো।
তিনি বলেন, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হতো। এছাড়াও
বিগত ২/৩ বছরে Bigo Live Apps এ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমান অর্থ জিয়া’র কাছ থেকে নিয়ে অপচয় করেছে হিমু। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো।
ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে তিনটায় গ্রেফতারকৃত জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় আসে। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে হিমু ও গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর মধ্যে বাকবিতন্ডার একপর্যায় হিমু তার বাসায় ভাংচুর করে।
বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে রুমের বাহির থেকে একটি মই এনে রুমের সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সাথে পূর্ব থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে তাকে জানায়।
তিনি আরও জানান, হিমু ইতিপূর্বেও ৩ থেকে ৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও পূর্বের ন্যায় ভিকটিম আত্মহত্যা করার ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু ভিকটিম হিমু একটু পর বেধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এসময় সে পাশের রুমে থাকা ভিকটিম হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে।
পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে হিমু’কে নিচে নামায়।
জিয়া, বাড়ির দারোয়ান এবং মিহির হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম হিমুকে মৃত ঘোষনা করেন।
হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তার আত্মহত্যার বিষয়টি বুঝতে পেরে থানা পুলিশ’কে অবহিত করা উদ্যোগ নিলে ভয় পেয়ে মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি হিমুর ব্যবহৃহ গাড়ি ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান।
জিয়াউদ্দিন আটক হলেও অভিনেত্রী হিমু’র মেকআপ ম্যান মিহির এখনো পলাতক রয়েছেন। তাকেও গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছেন গোয়েন্দা’রা।
জানা গেছে, জিয়াউদ্দিন ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফ্যানের হ্যাঙ্গারে রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অভিনেত্রী হিমুকে। সেখান থেকে হিমুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
হুমাইরা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্য জগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্য দলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন।
২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে হুমায়রা হিমু’র অভিষেক হয়। চলচ্চিত্রের গল্পটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এবং চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিল।