স্টাফ রিপোর্টার-
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। অর্ধশতাধিক যানবাহনে আগুন দেওয়াসহ অন্তত সাতটি পুলিশ বক্সে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এরই মধ্যে একটি বাসে আগুন দেওয়ার পর ওই বাসের চালক জানান, ভেস্ট পরা এক যুবক তার বাসে আগুন দেয়। এরপরই প্রশ্ন ওঠে, আগুন দেওয়া ওই ব্যক্তি গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য কিনা?
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছেন। এরই মধ্যে শনিবার গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বাসে আগুন দেওয়া ওই যুবক হলেন রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনি যুবদল ঢাকা দক্ষিণের সদস্য সচিব। তাকে ২০১৩-১৪ সালেও বাসে আগুন দেওয়ার একাধিক ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।
শনিবার রবিউল ইসলাম নয়ন ও তার সহযোগীরা লাঠি হাতে ঘুরে ঘুরে নাশকতা চালায় বলে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তারা বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে রবিউল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে নয়নকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করেছেন। নয়নকে গ্রেফতার করতে পারলে তার সঙ্গে আরও যারা ছিলেন তাদেরও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শনিবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মালিবাগ ফ্লাইওভারের ওপর বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ওই বাসে আগুনের ঘটনাটি ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন একটি বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরা অবস্থায় বাসটির পাশে ঘুরছেন। বুলেট প্রুফ জ্যাকেটে ‘প্রেস’ লেখা রয়েছে। তার হাতে একটি লাঠি। সঙ্গে বেশ কয়েকজন যুবক। এর মধ্যে একজন যুবক তরল জাতীয় পদার্থসহ একটি বোতল গাড়ির ভেতরে ছুড়ে মারছে।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা জানান, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাগুলোর ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য সংগ্রহের পর বিশ্লেষণ করেছেন তারা। পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য, রবিউল ইসলাম নয়ন ও তার সহযোগীরা মোটরসাইকেলে করে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাসে আগুন দিয়েছে।
শনিবার রাতেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, ‘যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরে আগুন লাগিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সংঘর্ষের সময় যারা পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগিয়েছে, ওই চক্রটিই ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য ভেস্ট পরা অবস্থায় বাসে আগুন দিতে পারে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রবিউল ইসলাম নয়নের গ্রামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুরের পানিঘাটা এলাকায়। স্কুলজীবন শেষে ঢাকায় এসে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া নয়ন একসময় ঢাকা মহানগর উত্তরের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের ও পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হন। সাহসী হওয়ার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুনজরে পড়েন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পরে মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব পদ দেওয়া হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নয়ন আগে থেকেই বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে দক্ষ। গত শনিবারও সে সহযোগীদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দেয়। এবার সে কৌশল হিসেবে প্রেস লেখা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ঘুরে বেড়ায়। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে যুবদল নেতা হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে।
গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, পুড়ে যাওয়া এক গাড়ির চালক ডিবির জ্যাকেট পরা এক যুবকের আগুন দেওয়ার কথা বলেছিলেন, সেটি ছিল নয়ন। গাড়িচালক প্রেস লেখাটিকে ডিবি বলে ধারণা করে থাকতে পারেন। নয়ন ও তার সহযোগীদের ধরতে পারলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। কার নির্দেশনায় নয়ন আগুন দিয়েছে তা জানা যাবে।