নিজস্ব প্রতিবেদক
নড়াইল জেলার লোহাগড়ায় বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অমান্য করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার দিনভর ও শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে লোহাগড়া উপজেলার রায়গ্রামে সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়।
গত ছয় মাস যাবত দখলের পরিকল্পনার পর পুনরায় চলতি মাসের ১০ জুলাই দিনভর ও শনিবার সকালে অন্য ওয়ারিশদের সম্পত্তি বুঝিয়ে না দিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় জোরপূর্বক ভবন নির্মাণ করে আসছে ওয়ালিউর রহমান সবুর নামে এক ভূমিদস্যু। পরে তার বিরুদ্ধে ১১ জুলাই নড়াইলের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করা হলে আদালত ওই নালিশী সম্পত্তিতে ১৪৫ ধারা জারি করে। তারপরও আদালতের আদেশ অমান্য করে দিনভর ভবন নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত ওয়ালিউর রহমান সবুর নামের ওই ভূমিদস্যুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান ও একাধিক হত্যা মামলার আসামি আব্দুর রহিম, মাহবুবুর রহমান, কলম সহ ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সীমানা নির্ধারণ না করে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী উক্ত জমি দখলের পর ভবন নির্মাণ করে আসছে।

সম্প্রতি লোহাগড়া থানার রায়গ্রামের সংগঠিত সিরাজুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলার বাদীকে ফুসলিয়ে মরহুম তাজিবুর রহমানের ছেলে মো: মুছানুর রহমান ও তার চাচাতো ভাই মরহুম আজহার মোল্লার ছেলে পোস্টমাস্টার মো: ইউনুস আলী মোল্লাসহ কয়েকজনকে ফাঁসিয়ে এলাকা ছাড়া করে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
শুধু তাই নয় নালিশি সম্পত্তির উপর দীর্ঘদিনের নির্মিত একটি দোকান ঘর মালামাল সহ লুটপাট করে স্থাপনাটি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়। বিজ্ঞ আদালতে দায়ের হওয়া মামলার বাদী রায়গ্রাম এলাকার মৃত তাজিবুর রহমানের বড় মেয়ে নার্গিস হেনা সাংবাদিকদের কাছে এই অভিযোগ করেন।
স্থানীয় সূত্র, নড়াইল জেলার বেঞ্চ সহকারি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের হওয়া মামলা সূত্র ও ভূমি অফিস থেকে জানা যায়, উপজেলার ৫০ নং রায়গ্রাম মৌজার আর.এস ৩৩৫ নং খতিয়ান হতে ১৬৩/২০২০-২১ নং পৃথক ১১৭৯ নং খতিয়ানে আর.এস ১৭৩৯ নং দাগে ৪৭ শতক জমি ১ পুত্র মুছানুর রহমান এবং ৫ কন্যা নার্গিস হেনা, আনোয়ারা, জাহানারা, নাদিরা আক্তার ও ময়না বেগমকে ওয়ারিশ রেখে তাজিবুর রহমান মারা যান। উক্ত দাগের ৫ শতাংশ জমি উত্তরাধিকার সূত্রে এবং ৪ শতাংশ জমি অন্যান্য বোনদের থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে ভোগ দখলে আছেন নার্গিস হেনা। এই সম্পত্তির মধ্যে ৫ বোনের একমাত্র ভাই মুছানুর রহমান ৪৭ শতাংশের পুরো অংশের অচিন্তিত ১০ শতাংশ জমি ভাগে পায়। পরবর্তীতে মৌখিক ভাবে এই জমিতে না আসার শর্ত সাপেক্ষে ভাই মুছানুর রহমানের কাছ থেকে তার অংশটি বোন ময়না বেগমকে ডিক্লারেশন অফ হেবা দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। এর কিছুদিন পর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ময়না বেগম মারা গেলে তার স্বামী ওয়ালিউর রহমান সবুর শশুর বাড়ি এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে কৌশলে ১০ শতাংশ সহ অন্য ওয়ারিশদের জমি দখলের চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তাকে বন্টন নামা দলিলের জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানালে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। পরে বাবার ভিটায় একমাত্র ভাইয়ের ঠাই রক্ষায় বড় বোন নার্গিস হেনা, আনোয়ারা, জাহানারা বেগম ও নাদিরা আক্তার তাদের অংশ হতে ৪ শতাংশ জমি মুছানুর রহমানের নামে লিখে দেন। পূর্ব কলহের জেরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি হত্যাকাণ্ডে নিরীহ মুছানুর রহমান সহ তার আরো এক চাচাতো ভাই পোস্টমাস্টার ইউনুস আলী মোল্লাকে মামলায় ফাঁসিয়ে এলাকা ছাড়া করে। পরে মুছানুরের মালিকানাধীন একটি দোকান ঘর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট সহ স্থাপনাটি নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে পাশেই জোরপূর্বক ভবন নির্মাণ করে আসছে বোনজামাই ভূমিদস্যু ওয়ালিউর রহমান সবুর।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, ওয়ালিউর রহমান সবুরের প্রভাবে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। সে নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে শ্বশুরবাড়ি রায়গ্রাম এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। তাদের দিয়েই মূলত দখল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সে রেলমন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারি করে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাইকে ম্যানেজ করে চলেন ঠিকাদার সবুর। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অংশগুলো বন্টনের জেরে সম্প্রতি নিজের স্ত্রীর ছোট ভাই মুছানুর রহমানকেও মামলায় জড়িয়ে পথের কাঁটা দূর করেছেন ওয়ালিউর রহমান সবুর। এই নালিশি সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
মামলা নং-৩৩২/২০২৩। একই তারিখে নালিশি জমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ও অভিযুক্ত ওয়ালিউর রহমান সবুরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ডকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অভিযুক্ত ওয়ালিউর রহমান সবুর বলেন, আমি কারো জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করছি না। আমার স্ত্রীর নামে হেবাকৃত দলিলের ১০ শতাংশ ও ওয়ারিশ সূত্রে ৫ শতাংশ আগে বুঝিয়ে চাই। আমার টাকা আছে তাই অনেক মানুষকে সহায়তা করে থাকি এজন্য অনেকেই আমাকে ভালোবাসেন। তবে নিজের স্ত্রীর ভাই মুছানুর রহমানকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর না দিয়েই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: নাসির উদ্দিন জানান, বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রায়গ্রামের সিরাজুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন নিরীহ মানুষ ওই মামলায় আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এটা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে।
বা বু ম/ অভিজিৎ রায়