নিজস্ব প্রতিবেদক
সাভার উপজেলার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভূঁইয়াকে মামলায় ফাঁসাতে ও থানা পুলিশকে বিব্রত করতে নাটক সাজানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। চরিত্রের প্রয়োজনে ওই চেয়ারম্যানের বোনের বাড়ির গৃহকর্মী নাজিরা বেগমকে ব্যবহার করা হয়েছে।
অভিযুক্ত আব্দুল হালিম মৃধা আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বিতর্কিত ব্যবসায়ী, অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানকারী ও কথিত সিআইপি তানভীর আহমেদ রোমান ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ অনুসারী।
বিষয়টি শিকার করেছেন গৃহকর্মী নাজিরা বেগমের স্বামী ও ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার মাইজবাগ গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে বোরহান উদ্দিন।
তিনি প্রতিবেদককে জানান, ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মৃধা নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সুমন আহমেদ ভূঁইয়া ও তার বোনজামাই রুবেল আহমেদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার জন্য বলেন। এ সময় দুইজন সাংবাদিককে ভুল তথ্য দিয়ে সাথে নিয়ে এসেছিলেন। পরে তারা আমাদের বক্তব্য ভিডিও ধারণ করেন। এ সময় তাদের সামনেই এই ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন আব্দুল হালিম মৃধা।
এ সময় তাদেরকে অসুস্থ সাজিয়ে প্রথমে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি এবং আশুলিয়া থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে বলেন হালিম মৃধা। তারা অভিযোগ দিতে না চাইলেও এক পর্যায়ে জোরপূর্বক তাদের থানায় পাঠানো হয়। পরদিন বাইপাইল থেকে ট্রাক ভাড়া করে ওই গৃহকর্মীর বাড়ির সব মালামাল সরিয়ে অন্যত্র নেওয়ার জন্য কৌশল করে এই ইউপি সদস্য। পরে আব্দুল হালিম মৃধার স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যান বোরহান উদ্দিন ও তার স্ত্রী গৃহকর্মী নাজিরা বেগম।
বোরহান উদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, হালিম মৃধা ভাই আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন পরে আর সেভাবে সহযোগিতা করেননি। অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ বিষয়টা বারবার তাকে জানানোর পরেও তিনি আশ্বাস দিয়ে ঘুরিয়েছেন। কই.? সে তো অনেক কিছু দিতে চেয়েছিল.! তা তো পাইলাম না.!
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (২০ জুন) ইয়ারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভুইয়ার বোন ইতির বাসার গৃহকর্মী নাজিরা বেগম একটি স্বর্ণের চেইন চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা খাওয়ার উপক্রম হয়। পরে সে তাড়াহুড়া করে টয়লেটে প্রবেশ করলে ইতির সন্দেহ হয়। তাকে দরজা খুলতে বললে সে টয়লেটের কমোটে স্বর্ণের চেইনটি ফেলে দেয়। এক পর্যায়ে বাসার জিনিসপত্র খোঁজাখুঁজি শুরু হলে চেইন চুরির বিষয়টি প্রকাশ পায়। জিজ্ঞেস করা হলে গৃহকর্মী চুরির বিষয়ে অস্বীকার করে বসে। পরে তার স্বামী বোরহান উদ্দিনকে ডেকে পাঠানো হয়। গৃহকর্মী নাজিরা বেগমের স্বামী বোরহান উদ্দিন এসে পুরো বিষয়টি জানার পর তার সামনেও চেইন চুরির অভিযোগ অস্বীকার করলে তাকে মারধর শুরু করেন এবং ভুল বসত এই কাজটি করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য বলেন তার স্বামী বোরহান উদ্দিন। তার কথা না শোনায় লাঠি দিয়ে তাকে পিটিয়ে বিচার করেন স্বামী বোরহান উদ্দিন। পরে চেইনের অর্থ পরিশোধ করবেন কথা দিয়ে এবং ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়ে বাসায় চলে যান। স্বামীর মারধরের শিকার গৃহকর্মী নাজিরা বেগম একটি ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে গেলে আব্দুল হালিম মৃধার চোখে পড়ে। তাকে বিষয়টি জানানোর পর তার স্বামী বোরহান উদ্দীনকে ডেকে নিয়ে ঘটনার গণেশ উল্টে যায়। তারা আব্দুল হালিম মৃধার ফাঁদে পা দিয়ে ঘটনার ৫ দিন পর ভিন্ন নাটক সাজায়। বোরহানউদ্দিন ও নাজিরা বেগম থানায় গেলে ডিউটি অফিসার তাদের একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন পাশাপাশি বিট অফিসার এসআই নুর খানের সাথে তদন্তের জন্য যোগাযোগ করতে বলেন। হালিম মৃধার চালাকি ও ঘটনার সত্যতা না থাকায় তারা আর যোগাযোগ না করেই পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নুর খান সাংবাদিকদের বলেন, বোরহানউদ্দিন যে সময় থানায় যায় আমি ওই সময় জামগড়া এলাকায় ডিউটিতে ছিলাম। আমাকে তাড়া ফোন দিলে তাকে দেখা করতে বললে পরে আর তারা আমার সাথে দেখা করে নাই।
এদিকে নাজিরা বেগম ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভূঁইয়ার বোন ইতির বাসায় দীর্ঘ চার বছর যাবৎ গৃহকর্মীর কাজ করে আসছিলেন। তার স্বামী বোরহান উদ্দিন, ছেলে বায়জিদ বোস্তামী, মেয়ে সুমাইয়া আক্তারকে সাথে নিয়ে জামগড়া এলাকার বাঁশতলা মহল্লার আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন। গৃহ কর্মীর স্বামী বোরহান উদ্দিন ডেকোরেটরের কাজ করার সুবাদে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মৃধার সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদেরকে এভাবে নাটকের কাজে ব্যবহার করে এই বিতর্কিত ইউপি সদস্য।
ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভূঁইয়া ও তার বোন জামাই বিজিএমইয়ের সদস্য এবং দিব্য ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবেল আহমেদ সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসন ও প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এর আগে আদালতের ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি ছিলেন বিতর্কিত ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মৃধা। এক আইনজীবীর দায়ের করা মারামারির মামলায় আদালতের পরোয়ানার ভিত্তিতে চলতি বছরের মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে সোপর্দ করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
সেই সময় বিতর্কিত ইউপি সদস্য হালিম মৃধাকে গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে মিষ্টি বিতরণ করে স্থানীয় এলাকাবাসী। আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক, সাংবাদিকে হত্যা চেষ্টা, মারামারি, জমিদখল, সাধারণ মানুষকে নির্যাতনসহ বেশ কয়েকটি মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের ৮ জুলাই (শনিবার) আশুলিয়ার গাজিরচট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সংবাদ সংগ্রহকালে জিটিভির সাংবাদিক শেখ শরিফের ওপর মাদকাসক্ত অবস্থায় হামলা করেন এই ইউপি সদস্য। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি আব্দুল হালিম মৃধাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীটও দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা।
এছাড়া, গত ১২ অক্টোবর বিকেলে ধামসোনা ইউনিয়নের কাইচাবাড়ি আহাদনগর এলাকায় দলবল নিয়ে জমি দখল ও রড দিয়ে কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার প্রধান আসামি বিতর্কিত ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মৃধা।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম মৃধার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে একজন জনপ্রতিনিধিকে ফাঁসাতে নাটক ও পুলিশকে বিব্রত করার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একটি সূত্র।
বা বু ম/ সুমন রায়